ঢাকা শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র

আ.লীগ আমলে প্রতি বছরে পাচার হয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম

আ.লীগ আমলে প্রতি বছরে পাচার হয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রতিবেদনের বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় এই কমিটিকে।

ইতোমধ্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আগামী রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দেবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। আগামী সোমবার প্রতিবেদনটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে কমিটি। অর্থনৈতিক খবরের সাবস্ক্রিপশন

জানা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সরকারি নথি ও বৈশ্বিক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে শ্বেতপত্রে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি কমিটি। কীভাবে অর্থ পাচার হয় এবং কীভাবে তা বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে গবেষণা ও ধারণাভিত্তিক কিছু তথ্য দিয়ে আসছে বিভিন্ন সংস্থা। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন,  বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, কর ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ভুল চালানের কারণে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে বাংলাদেশ।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শ্বেতপত্রে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্রটিই তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শীর্ষক ২৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে থাকছে অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে ২২টি অধ্যায়।

এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাত,  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পরিস্থিতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব আয়, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও বৈষম্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর ওপরও থাকছে বিশ্লেষণধর্মী পর্যবেক্ষণ।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, জনশক্তি রপ্তানি বিশেষজ্ঞ তাসনিম সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শারমিন্দ নীলোর্মি এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

আরবি/ এইচএম

Link copied!