ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নাফিজ সরাফাতের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০২:৩২ পিএম

নাফিজ সরাফাতের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে কমিটি

ছবি সংগূহীত

ঢাকা: চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে অনিয়ম তদন্তে কমিটি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আলোচিত ব্যক্তি নাফিজ সরাফাত ও তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অনিয়ম তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বুধবার এই তথ্য জানায় বিএসইসি।

বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানিয়েছে, তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হককে। অপর দুই সদস্য হলেন বিএসইসির উপপরিচালক রফিকুন নবী ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের নামে নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংক থেকে কয়েক শ কোটি টাকা সরিয়ে নেন। বিকল্প বিনিয়োগের নামে পদ্মা ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয় এই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে। পরে সেই অর্থ নাফিজ সরাফতের মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। এভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।

বিকল্প বিনিয়োগের নামে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে তহবিলের ব্যবহার এবং এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটিকে। কমিটিকে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে কি না, তহবিলের ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য যাচাই–বাছাই, তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমার বিপরীতে কী পরিমাণ সুদ পেয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে কী পরিমাণ মুনাফা পেয়েছে—এসব তথ্যও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

এর বাইরে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অনিয়মও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাফিজ সরাফাত ও তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৩ সালে বিএসইসির নিবন্ধন পায়। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এই চারটি ফান্ডের প্রাথমিক আকার ৩২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় পৌনে দুই শ কোটি টাকার দুটি তহবিলের উদ্যোক্তা বা স্পনসর পদ্মা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। আবার দীর্ঘদিন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন নাফিজ সরাফাত। অর্থাৎ নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেরই আরেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে অর্থ সরিয়ে নেন তিনি।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত বিভিন্ন তহবিলের অর্থ নানাভাবে অপব্যবহার করে নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন নাফিজ সরাফাত। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সরকারঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এসব অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসিসহ কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নাফিজ সরাফাতের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে মাঠে নামে বিএসইসিসহ বিভিন্ন সংস্থা।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের নামে ২০১৩ সালে নিবন্ধন সনদ ইস্যু করতে বিএসইসিতে নাফিজ সরাফাতের হয়ে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) তৎকালীন কিছু কর্মকর্তা। নাফিজ সরাফাত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংস্থাটির তৎকালীন কিছু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁকে কাজ পাইয়ে দিতে এসব কর্মকর্তা সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

আরবি/এস

Link copied!