ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
তোপের মুখে বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজার ও ডিএসই নিয়ে প্রশ্নের মুখে নতুন কমিশন

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম

পুঁজিবাজার ও ডিএসই নিয়ে প্রশ্নের মুখে নতুন কমিশন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ডিএসইর কমিশনারকে পদত্যাগে অর্থ মন্ত্রণালয় তিন মাসের সময় দিলেও দপ্তরবিহীন করে বিএসইসি
সাবেক গভর্নরের মতো বিএসইসিতে সাংবাদিকদের প্রবেশে নতুন কমিশনের কড়া বিধিনিষেধ
প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ


সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে নতুন বিধিনিষেধ তৈরি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করার সময় বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েন কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের নিয়োগ পাওয়া সাবেক গভর্নরের মতো বিএসইসিতে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কমিশনার তারিকুজ্জামানকে হঠাৎ অব্যাহতি এবং পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীলতায় নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বিএসইসিকে।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা বিএসইসির বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়েই চেয়ারম্যান স্থান ত্যাগ করলে ভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বর্তমান কমিশনের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগে পুঁজিবাজারে নেতীবাচক প্রভাব, সাংবাদিক প্রবেশাধীকার ও ডিএসইর কমিশনারকে ঘিরে প্রবল সমালোচনার মুখে ফেলেছে বিএসইসিকে।

তার আগে পুঁজিবাজারের অনিয়ম তদারকিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্স প্রযুক্তি অত্যন্ত দুর্বল এবং পুরোনোর বিষয়ে কথা বলেন চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ। তিনি বলেন, ১২ বছর হয়েছে কিন্তু সার্ভেইল্যান্স প্রযুক্তি নবায়ন করা হয়নি। তাই উন্নত সার্ভেইল্যান্স নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। কী কী ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পেতে পারি, সে সম্পর্কে আলাপ করেছি। প্রথমেই আমরা সার্ভেইল্যান্সের ওপর জোর দিয়েছি। সার্ভেইল্যান্স টিম যেটা আছে, সেটাকে আমরা কীভাবে আরও উন্নত করতে পারি, তা নিয়ে কথা বলেছি। এ ছাড়াও আমাদের নিজেদের ইআরপি এবং আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ কীভাবে করা যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।

সার্ভেইল্যান্স সম্পর্কে বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, সার্ভিলেন্স নিয়ে কথা বলেছি এবং গভর্ন্যান্সটার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্বল সার্ভেইল্যান্স নিয়ে আমরা কাজ করছি। ২০১২ সালে ইনস্টল করা একটা সফটওয়্যার। খুব শিগগির এটা আপগ্রেড করতে হবে। ২০১২ সালের পর আপগ্রেডও হয়নি। বিশ্বমানের করতে তাদের সহায়তা আমরা চেয়েছি। টেকনিক্যাল এবং সব ধরনের অ্যাসিস্ট্যান্স আমরা চাই।

কমিশনার লালারুখ আরও বলেন, গভর্ন্যান্স থেকে আমরা শুরু করতে চাই। জবাবদিহিতা সবার আগে নিজেদের ঘর থেকেই আমরা শুরু করব, তারপর বাকি সব খাতের জবাবদিহিতার জন্য যাব।

ডিএসইর কমিশনার এটিএম তারিকুজ্জামানকে তিন মাসের সময় দিয়ে তাকে অব্যাহতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয় কিন্তু বিএসইসি তাকে দপ্তরবিহীন করেছে কেন, জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, কিছু কাজ মন্ত্রণালয়ের সাথে কো-অর্ডিনেটর হয়ে কাজ করতে হয়। এই বিষয়ে পাবলিকলি কিছু বলার নেই। বিএসইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কিনা জানতে চাইলে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের মতো বিএসইসিতেও সাংবাদিকের প্রবেশ কড়াকড়ি চলছে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এতে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে হয়রানী করার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার মোহসীন চৌধুরী বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কিছু সিস্টেমেটিক ওয়েতে চলতে হয়। আপনাদের বিএসইসিতে আসা এবং যে সব তথ্য প্রয়োজন, সেগুলো আপনার সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে নেবেন। আমরা কোনো সময় বারণ করব না। সিস্টেমেটিক ওয়েতে আসলে একটা ডিসিপ্লিন থাকে।

কী ধরনের সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ঢুকতে গেলে একটা রেজিস্ট্রার বই থাকে, কার কাছে যাবেন, সেটা জানাবেন। বইয়ে এন্ট্রি করে তারপর ঢুকবেন।

এতে শুধু একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় এবং তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরা হলে তখন মাইক্রোফোনের কাছে এগিয়ে আসেন বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ। তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামটা শেষ হলে আমরা আলাদাভাবে আলোচনা করব। আজকে ডেকেছিলাম বিশ্বব্যাংকের মতবিনিময়ের আপডেট জানানোর জন্য। তবে পরে অন্য একটি মিটিংয়ের কথা বলে হঠাৎ ব্রিফ শেষ করে চলে যান তিনি।

এদিকে, বিএসইসিতে সাংবাদিকদের প্রবেশ, বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব না দেওয়া এবং স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, কমিশনার তারিকুজ্জামানকে মেয়াদ শেষের আগেই সব বিভাগের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করাসহ বর্তমান কমিশনের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের সমালোচনামূলক জেরার মুখে ফেলেছে বিএসইসিকে।

‘প্রোগ্রামটা শেষ হলে আমরা আলাদাভাবে আলোচনা করব’ বলা হলেও বেলা তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ অনেক সাংবাদিক লবিতে ছিলেন কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে আর উত্তর আসেনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!