ঢাকা: শঙ্কায় মোড়ানো অর্থনীতি নিয়ে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সরকার ছিল বেকায়দার। সংবেদনশীল খাতের ২০টি রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জিভূত ১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ ঘাটতি। অন্যদিকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার হওয়ায় সঙ্কট ঘনীভূত হয়। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ায় জ্বালানী খাতের ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে পরিবর্তিত চলমান সরকার।
তবে সময়ের ব্যবধানে অন্তর্বর্তী সরকার এখন বিনিয়োগ সম্ভাবনায় ভাসছে। বিশ্বের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইউনূস সরকারের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। যার কারণে শঙ্কার অর্থনীতি এখন সম্ভাবনার বাতাসে দুলছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন চুক্তির সহায়তা দিয়ে শুরু করেছে চলমান অর্থনীতির যাত্রা।
একদিকে সংকট সমাধানে সহজ শর্তে বিদেশি ঋণ ও আর্থিকখাতে সংস্কারে নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে সুদের হার আরও বাড়াতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা আওয়ামী সরকার অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো- মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরে বাজারের নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে কমানো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ওভারনাইট রেপো সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের ওপর সুদের হার বেড়ে যাবে। অন্যদিকে কমবে বাজারের নিত্য পণ্যের দাম।
দেশের আর্থিক খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ পাচারের তথ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সরকার। অন্যদিকে দেশের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের (১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার) নীচে হওয়ায় আরো শঙ্কার কারণ হয়ে ওঠে। তবে বাংলাদেশের চলমান সমস্যায় বাজেট সহায়তা, ব্যাংকের তারল্য সংকট সমাধান ও সংস্কারে বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলে সস্প্রতি জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নতুন সরকার। পাচারের টাকা ফেরাতেও চলছে চেষ্টা।
একইসঙ্গে আইএমএফ, আইডিবি, এডিবি ও অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নীতি ও আর্থিক সহায়তা দেবে। বর্তমানে নিউইয়র্ক সফররত সরকার প্রধানকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন। ফলে সসস্যার আবর্তে থাকা বাংলাদেশ সম্ভাবনার দিকে হাঁটছে।
বিশ্বব্যাংক ১০০ কোটি ও আইডিবি দেবে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার
আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। একইসঙ্গে ব্যাংক বাংলাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আগামী তিন বছরে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৪০০-৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। সচিবালয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট সহায়তা, তারল্য সংকট সমাধান ও সংস্কারে বিশ্বব্যাংক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এরমধ্যে, পলিসি বেসড লোন হিসেবে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ইনভেস্টমেন্ট লোন ও গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে এ ঋণ অনুমোন হওয়ার কথা রয়েছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ১১ বিলিয়ন ডলার
প্রায় এক যুগ ধরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ও বাজেট ঘাটতি নিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রথাবিরোধের ধাক্কায় হঠাৎ পতন হওয়া আওয়ামী সরকারের আর্থিক দায় গ্রহন করে নতুন সরকার। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল বা পণ্য আমদানিতে খোলা ঋণপত্রের (এলসি) বিল পরিশোধে পর্যাপ্ত ডলার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের বিদেশি এলসির মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি বিলের দায় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি (১১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। আর বেসরকারি খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ডলার। তারমধ্যে সর্বোচ্চ দায় নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির দায়ের পরিমাণ ৯৩৬ কোটি বা (৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার।
বিদেশি আয়ের রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে বিদেশি আয়ের রিজার্ভ রয়েছে ২৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার নিয়মিত হালনাগাদের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে। দেশের পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থায় অর্থনীতিক খাতে বিশেষ উন্নতির হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে প্রবাসী আয়ের গতি অনেক বেড়েছে। রেমিটেন্সে যোদ্ধারা দেশে প্রবাসী আয়ের সীমা প্রতি মাসে বাড়াচ্ছেন।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাবের মান অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস বা মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৪৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা ২৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
আওয়ামী লীগ সরকারের দায় থেকে বেরিয়ে আসর চেষ্টা করছে অন্তর্বতী সরকার। বিশ্বের সেরা উন্নয়ন সহযোগী ও অর্থলগ্নিকারী প্রতষ্ঠানগুলোর আশ্বাসে সরকারের গতি বাড়ছে। ফলে শঙ্কার অর্থনীতি এখন সম্ভাবনার বাতাসে দুলছে।
আপনার মতামত লিখুন :