ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৪
রিজার্ভের পালে হাওয়া

মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীদের রেমিট্যান্সের জোয়ার!

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম

মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীদের রেমিট্যান্সের জোয়ার!

ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ায় দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বাংলাদেশ। দক্ষ শ্রমিকরা স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যেতে পারলে সে দেশের শ্রমিক সংকট নিরসন ও অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখতে পারবে তেমনি বাংলাদেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে পারবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২২ মাসে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ জন শ্রমিক মালশিয়ায় গিয়েছেন। এসব অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের জন্য গত ৩ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের অদূরদর্শীতায় মালয়েশিয়া সরকারের সমঝোতা স্মারক প্রস্তাবে রাজী হয়ে এজন্সি দিয়ে কর্মী পাঠিয়ে অনিয়ম-দূর্নীতি দায়ভার নিতে হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিদের। এ কারণে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সদস্যদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য দায়ী দুই সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী ও সচিবরা। তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন, বায়রা’র সাধারণ সদস্যরা।

এদিকে, জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে শ্রমিক পাঠানো গেলে দুই দেশেই উপকৃত হবে।

সংশ্লিস্টরা জানান, বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের আওতায় ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২২ মাসে পৌনে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গমন করেছে। বিশাল এই অভিবাসন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে অনলাইনভিত্তিক ও স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার পদ্ধতি হওয়ায় কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হননি। তারা যথাযথ নিয়মে নিয়োগকারী কোম্পানিতে কাজ পেয়েছেন।

এসব শ্রমিকরা ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন এবং সেটা রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন। ওই ২২ মাসে যাওয়া শ্রমিকরা ন্যূনতম ১৫শ’ রিঙ্গিত মূল বেতন এবং ওভারটাইমসহ মাসে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এ হিসেবে তারা মাসে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। শ্রমিক পাঠানো এ পক্রিয়ায় যদি আরো ৫০০ এজেন্সি যুক্ত হতে পারতো তাহলে কোন বিতর্কই থাকতো না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ১ হাজার ১০০ সহযোগি এজন্সি এই প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল।

রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি জনশক্তিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়া যাওয়া শ্রমকিরা সেখানকার কাজের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের পাঠানো কর্মীদের প্রায় সবাই ভালো আছেন। এছাড়া, মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্মীদের চুক্তি মোতাবেক সকল প্রকার অধিকার ও কল্যাণ আন্তরিকতার সঙ্গে নিশ্চিত করেছেন।

২২ মাসে যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কাজে যোগদান করেছে। তাদের করণে বাংলাদেশে বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মালয়েশিয়া ৮ম থেকে ৪র্থ স্থানে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মালয়েশিয়া হতে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫১ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জানা গেছে, মেসার্স ক্যাথারসীজ ইন্টারন্যাশনাল’র ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে ৩৫৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তাদের নিয়োগকারী কোম্পানি সব অভিবাসন ব্যয় বহন করেছে এবং বাংলাদেশের এজেন্সিকেও ব্যাংকিং চ্যানেলে মালয়েশিয়া হতে রিক্রুটিং চার্জ পরিশোধ করেছে। এর ফলে মালয়েশিয়ায় গমনকারী পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজন মিলে অন্তত ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।

আরও জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত ১০১টি এজেন্সিসহ সহযোগী এজেন্সি এবং নিয়োগকারীর পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রায় ১১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি বর্তমান ধাপের মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক বলেন, কোনো একটি দেশে কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সির বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে দুদক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দফায় দফায় তদন্ত অথবা গণমাধ্যমে অপপ্রচারের কারণে নিয়োগকারী দেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর ফলে ওই দেশে কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।

সরকারের এ্যালোকেশন অব বিজনেস মোতাবেক জনশক্তি রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন তদন্তে যারা ভালো ব্যবাসায়ী হিসিবে পরিচিতি পেয়েছেন তাদের সহযোগিতা ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বিদ্যমান আইনের আওতায় তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া উচিত। এই সেক্টরে বর্তমানে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা দূর করে দ্রুতই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শীঘ্রই পুনরায় উন্মুক্ত হবে বলে আশা করছেন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা।

বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পদক আলী হায়দার চৌধুরী জানান, মালয়েশিয়া প্লান্টেশন ও কৃষি খাতে বিদেশি কর্মীর চাহিদা প্রচুর। মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সেদেশের শ্রমিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীদের নেওয়ার বিরাট সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনে আসেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকার মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিষয় সবসময় আন্তরিক। আমরা ওইসব দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।

আরবি/ এইচএম

Link copied!