ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ঘেরাও, প্রবেশ গেটে তালা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ঘেরাও, প্রবেশ গেটে তালা

ছবি: সংগৃহীত

টাকা না পেয়ে চাঁদপুর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ঘেরাও করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে গ্রাহকরা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্স ভবনে টাকার জন্য চেক নিয়ে গ্রাহকরা জড়ো হোন। এসময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা লেনদেন বন্ধ রাখলে উত্তেজিত গ্রাহকরা প্রবেশ গেটে তালা লাগিয়ে দেন।

ব্যাংকের শাখা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত গ্রাহক ব্যাংকে টাকা তুলতে আসছেন। এই সংকট সমাধানের জন্য সবার আস্থা দরকার। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

জানা গেছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড চাঁদপুর জেলা শাখায় ২২ হাজার গ্রাহক। বর্তমানে ১০০ গ্রাহকের টাকাও দিতে পারছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন শাখায় টাকা সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। এতে টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তাঁরা।

সরকার পতনের পর থেকে পুরোদমে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের টাকা লেনদেনের জটিলতা শুরু হয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও স্বাভাবিক হয়নি ব্যাংক লেনদেন। বর্তমানে জেলার এই ব্যাংকে ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দিতে পারছে। টাকা সংকটে এখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলো।

এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘আমি এইখানে গত তিন মাস থেকে আসতেছি। ওনারা কখনও ৫ হাজার, কখনও ১০ হাজার করে টাকা দিচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ওনারা ৫ হাজার টাকাই দিচ্ছে। কোনোদিন ৫ হাজার পাচ্ছি আবার কোনোদিন তাও পাচ্ছি না। আজকে সব গ্রাহকেরা মিলে ব্যাংকের গেটে তালা মেরে দিয়েছি।’

আরেক বৃদ্ধ গ্রাহক বলেন, ‘৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জমা দিছিলাম। এরপর ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা আছে। এখন টাকা দেয় না। ঢাকা থেকে আমার ছেলে টাকা উঠায়ছিল। এই ব্যাংকের থেকে আমি চাইরআনাও উঠাইতে পারি নাই।’

এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি ইসলামী স্যোস্যাল ব্যাংকের একজন গ্রাহক। আমি ব্যবসার টাকা ব্যাংকে রাখছি। আমি আজ ২০ লাখ টাকা তুলতে আসছি, কিন্তু ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ওপরে টাকা দিচ্ছে না। আজকে প্রায় দুই মাস যাবৎ এই অবস্থা।’

এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চাঁদপুর শাখার ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘এই সমস্যাটা শুরু হইছে আসলে সরকার পতনের কিছুদিন আগে থেকে। এখন এইখানে আমাদের লিকুইডিটি (তারল্য) সাপোর্ট দরকার। আমাদের তারল্য সংকট রয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক আমাদের সহায়তা করতেছে। আরও কিছু কিছু ব্যাংক আমাদের সহায়তা করবে। আমরা প্রথম তারল্য সহায়তা প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা পেয়েছি। ওইখান থেকে পল্লী বিদ্যুৎ, বাকরাবাদ গ্যাস, তিতাস গ্যাস, জিটিসিএল, বিটিসিএল, বিআরটিএ, চট্টগ্রাম পোর্ট, এদের পেমেন্ট দিয়ে ফেলেছি। পেমেন্ট দেওয়ার ফলে আমাদের অল্প কিছু টাকা ছিল, যেগুলো আমরা এতদিন গ্রাহকদের দিয়েছি। এখন আবার একটা তারল্য সহায়তা পেয়েছি। আশা করছি ২-৩ মাসের মধ্যে ব্যাংক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে।

সংকট বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ তুলে ধরে ব্যাংক ম্যানেজার মাহবুব আলম বলেন, ‘গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংকে আসছে। যেখানে প্রত্যেক দিন ৬০ থেকে ৭০ জন গ্রাহক টাকা তুলতে আসত, সেখানে এখন আসে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ। যার কারণে আমরা আসলে চাহিদামতো পেমেন্ট দিতে পারি না। মানুষের আস্থা যদি ফিরে আসে তাহলে আমরা আবার স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসব।’

আরবি/এফআই

Link copied!