ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

জীবন ধারণের মতো সরকারকে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম

জীবন ধারণের মতো সরকারকে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার দোহাই দিয়ে ন্যায্য মজুরি থেকে শ্রমিককে বঞ্চিত করা যাবে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মালিক-শ্রমিকের অংশগ্রহণের সমতাকে বিবেচনায় রেখে জীবন ধারণের মতো মজুরি নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে মালিকের সাধ্য এবং শ্রমিকের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে আইনগত ও যুক্তিসঙ্গতভাবে মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) আয়োজনে গোল টেবিল বৈঠকে রোববার (২৭ অক্টোবর) এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘বাংলাদেশে নিম্নতম মজুরী: প্রয়োগ ও কার্যকারিতার সন্ধানে’ শীর্ষক গবেষণা কার্যক্রমের ফল উপস্থাপন ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।  

বিলস -এর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিলস -এর মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শ্রম অধিপ্তরের মহাপরিচালক এনামুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, আইএলও’র প্রকল্প কর্মকর্তা নিরান রামজুঠান প্রমুখ।

মূলত চারটি সেক্টরের মজুরী নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে ভিত্তি ধরে এ গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। চারটি সেক্টর হচ্ছে- তৈরি পোশাক খাত, চা, ট্যানারি এবং চিংড়িখাত। গবেষণার উদ্দেশ্য, তৈরি পোশাক, চা, ট্যানারি এবং চিংড়িখাতের মজুরী নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের নিম্নতম মজুরী বোর্ডের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা, নিম্নতম মজুরী বোর্ডের কাঠামো, মজুরী নির্ধারণ প্রক্রিয়া, কৌশল এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করা । একই সঙ্গে নিম্নতম মজুরী বোর্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের প্রধান ভূমিকা চিহ্নিতকরণ, মজুরী বোর্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিলস নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজ আহমেদ।

মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, বোর্ডের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখেই মজুরি বোর্ডকে কাজ করতে হচ্ছে। শ্রমিকপক্ষ তাদের অধিকারের কথা মালিকপক্ষের মতো জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন না, এ কথা মালিকপক্ষকে বিবেচনায় রেখে তাদের শ্রমিকবান্ধব হতে হবে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, শ্রমিককে বঞ্চিত করার মনোভাব কাটিয়ে তাদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, বাজার পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। ঠিকাদারী ব্যবস্থার কারণে মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রমিকের যে হয়রানি হয় তার অবসান ঘটাতে হবে। সমীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের চাহিদা নিরূপণ করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন সঠিকভাব হচ্ছে কিনা তা মজুরি বোর্ড পরিবীক্ষণ করলে সেটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তারা আশা করেন। এ ছাড়া মজুরি বোর্ডকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

তারা বলেন, পাঁচ বছর পর মজুরি বোর্ড গঠন না করে প্রতি তিন বছর পর গঠন করলে সময়োপযোগী ও অধিক কার্যকরী হবে। এ ছাড়া বোর্ডের গঠন ও কার্যক্রমের সাথে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে মালিকের সাধ্য এবং শ্রমিকের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে আইনগত ও যুক্তিসঙ্গতভাবে মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

মজুরি বোর্ডে ভারসাম্যমূলক প্রতিনিধিত্ব এবং সদস্যদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা দরকার। মজুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের অগ্রগতি পর্যালোচনায় কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জোরালো ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।

তারা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে পুর্বের মজুরিতে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মজুরি নির্ধারণে এ বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। বর্তমানে মোট ৫৬ টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং এটির পরিবীক্ষণে পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে উল্লেখ করে জানানো হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, মজুরির বিষয়টি অর্থনৈতিক হলেও মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি হয়ে যায় রাজনৈতিক। এ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন যে, এ ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা কেউই এড়াতে পারেন না। তারা আরও মন্তব্য করেন অধিকার বঞ্চিত হলে জীবন বাঁচানোর তাগিদ শ্রমিককে প্রতিবাদী করে তোলে। এ বিষয়টি পুঁজি বিনিয়োগকারী, মালিকপক্ষ ও সরকারকে বুঝতে হবে।

পোশাক শ্রমিকের পক্ষে বক্তব্য দেন নাজমা আক্তার, ট্যানারি শ্রমিকের পক্ষে আব্দুল মালেক, চিংড়ি শ্রমিকের পক্ষে শাহাদাত হোসেন এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে রাজেকুজ্জমান রতন, বাদল খান, নূরুল ইসলাম, বাবুল আখতার, চায়না রহমান, তৌহিদুর রহমান, সালাউদ্দিন স্বপন, শহীদুল্লাহ বাদল প্রমুখ।

নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট এ কে এম নাসিম, শাহীনুর রহমান ও মালিকপক্ষের সংগঠনের পক্ষ থেকে মাহবুবুর রহমান ও আমিরুল ইসলাম।

আরবি/এস

Link copied!