ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪
কর্মশালায় বক্তারা

সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে হবে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম

সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে হবে

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

সবার জন্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। একইসাথে, ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘ডি’ দ্বারা সমৃদ্ধকরণের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ড্রামে বাজারজাতকৃত বেশিরভাগ ভোজ্যতেলই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ না হওয়ায় আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ। আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়, যার মধ্যে ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে।

কর্মশালায় আরো জানানো হয়, ভোজ্যতেল পরিবহণে ব্যবহার করা হয় নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম। এসব অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর ড্রামে সরবরাহকৃত ভোজ্যতেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। নন-ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক ড্রাম বারবার ব্যবহারের ফলে ভোজ্যতেল বিষাক্ত হতে পারে। ড্রামের খোলা ভোজ্যতেলে ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উৎস সনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা যায় না। ফলে দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একযোগে কাজ করার তাগিদ জানানো হয়।

ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ বিবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে ভোজ্যতেল ভিটামিন এ এবং ডি সমৃদ্ধকরণ হতে পারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। এতে জনগণ প্রতিদিনের ভোজ্যতেলে একই সাথে ভিটামিন এ এবং ডি পাবে।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী প্রমুখ।

আরবি/ এইচএম

Link copied!