ঢাকা: অর্থ পাচারে জড়িত বতর্মান ডেপুটি গভর্নরদের (ডিজি) বিরুদ্ধে গভর্নরের ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (৬ নভেম্বর) তিনি বলেন, ইডির উপরে কোন কর্মকর্তার ব্যাপারে এই নিয়ম প্রয়োজ্য নয়। নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পর্যন্ত সুনির্দিষ্ঠ অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে নিয়ম অনুসারে কেউ দায়মুক্ত নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তাদেও (ডিজি) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী ও সাঈদা খানমসহ অনেকে।
মুখপাত্রের এমন বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে গুঞ্জন শুরু হয়। তারা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের সম্পর্কে ব্যাপক নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু মাত্র ইসলামী শরীআভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে হুসনে আরা শিখা বলেন, একটি বিশেষ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ১১টি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি ব্যাংককে ৫হাজার ৫৮৫কোটি টাকা সহায়তাও দেয়া হয়। তবে এই সংকট কাটতে সময়ের প্রয়োজন। ব্যাংকগুলো থেকে পরিমাণে অল্প টাকা উত্তোলন কওে সহযোগিতা করা আহ্বান জানান তিনি। তবে কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই তার ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের এইচআর সেটা খতিয়ে দেখেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গর্ভনর বরাবর না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।
পতিত সরকারের সময় ব্যাংক খাতের অর্থ লুটপাট এবং পাচারে সঙ্গে সংশ্লিষ্টার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বহাল আছেন ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নুরুন নাহার এবং ড. হাবিবুর রহমান। তাদের পদত্যাগের ইখতিয়ার নেই বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পর্যন্ত সব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ঋণ জালিয়াতি, অববৈধ সুবিধা গ্রহণ এবং অন্যান্য অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিন দফা পলিসিরেট বাড়াতে হয়েছে। কেননা মূল্য নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতি সারা পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তবে বাংলাদেশে মূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তত ৬ মাস সময় চেয়েছেন গভর্ণর, বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এস আলম গ্রুপের টাকা পাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ফরমাল চ্যানেলে যে টাকা পাচার হয়েছে তা সুনির্দষ্ট করতে এবং টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা নিতে তিনটি ট্যক্সফোর্স কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে ল’ইয়ার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। এসব টাস্কফোর্স ব্যাংক খাতে সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। তবে যারা টাকার পাচার করেছে, তাদের নাম প্রকাশে নীতিগতভাবে বাধা রয়েছে।
ঋণ আদায়ে ৯ট শিল্প গ্রুপে রিসিভার সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগ করবে না। আদালত নির্দেশ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, অর্থ লুটে সহায়তার অভিযোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও মো. খুরশীদ আলম এবং নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের। একই সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ডিজি নুরুন নাহার এবং ড. হাবিবুর রহমান বহাল রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :