সাবেক শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক শিল্প কারখানা। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে। আবার বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে ব্যবসা চালাতে না পেরে খেলাপি হয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা।
এসব কারণে খেলাপি ঋণ পুণঃতফসিলে বিশেষ সুবিধার আবেদন জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশেষ ছাড়ে পুণঃতফসিলের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ পুনঃতফসিলের পাশাপাশি সুদ মওকুফ পাওয়া ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর মতো সুবিধা পাবেন তারা। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, ঢালাওভাবে না দিয়ে এবার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিধা দিতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করতে আলাদা কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। রাজনৈতিকসহ সবধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে কমিটি। এই উদ্যোগে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা কোনো সুবিধা পাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ব্যাংকগুলো প্রকৃত খেলাপিদের তথ্য পর্যালোচনা করে এই কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠাবে। সুপারিশ কমিটি এরপর এগুলো পর্যালোচনা করবে। তবে যেসব ঋণ নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত কারণে শ্রেণিকৃত হয়েছে সেগুলোই শুধু দেখা হবে। ইচ্ছাকৃত কোনো খেলাপি এই পর্যালোচনায় আসবে না। রাজনৈতিক প্রভাবে পাওয়া কোনো ঋণকে পুণঃতফসিলের আওতায় আনা হবে না বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা। যদিও আগে দেয়া বিশেষ সুবিধার অভিজ্ঞতা ভালো নয় বলেও জানান তারা। তবে প্রভাবমুক্ত থেকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিধা দেয়া হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এ নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পর্যালোচনা যদি ঠিকমত ব্যাংকের গ্রাহকের ভিত্তিতে হয়, তার সমস্যা সঠিকভাবে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়, এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি প্রভাবিত না হয় তাহলে আগেরবারের তুলনায় এটি ভিন্ন হবে। অবশ্যই ইতিবাচক ফলও আসবে। আগের ঋণ পুণঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির জন্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি প্রভাবমুক্ত থেকে এবং সঠিকভাবে আইন মেনে কাজ করে তবেই ইতিবাচক ফল আসবে। অন্যথায় ভালো কিছু হবে না।
বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুণঃতফসিলের বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আপনার মতামত লিখুন :