ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

পেট্রোবাংলার গ্যাস প্রকল্প বাতিল অবৈধ: সামিট গ্রুপ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

পেট্রোবাংলার গ্যাস প্রকল্প বাতিল অবৈধ: সামিট গ্রুপ

ছবি: সংগৃহীত

সামিট গ্রুপ পেট্রোবাংলাকে দেশের তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্প বাতিলের নোটিশটি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। সামিট বলেছে, এই প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তটি শুধু অবৈধ-ই নয়, বরং সামিট এফএসআরইউ প্রকল্পটি বিলম্বিত বাস্তবায়নে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।

উল্লেখ্য, সামিট এফএসআরইউ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) গ্রুপটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলাকে একটি চিঠি মারফত ওই নোটিশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এসপিআইএল)। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বাংলাদেশের সামিট এলএনজি টার্মিনাল ২ কোম্পানি লিমিটেড (এসএলএনজি ২)-এর নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানি।

বাংলাদেশের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকাভিত্তিক সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড (এসসিএল)-এর নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানি। উল্লেখ্য, এসএলএনজি ২, সামিট কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান।

পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে জানিয়েছে যে, এসএলএনজি ২-এর সঙ্গে পূর্বে স্বাক্ষরিত একটি টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট (“টিইউএ”) নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায়, চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।

গত ৩০ মার্চ ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলা সামিটের সঙ্গে দ্বিতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পের জন্য একটি টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট (TUA), আরেকটি ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (IA) স্বাক্ষর করে। এর আগে, এই চুক্তিগুলো ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভা কমিটির আইনি যাচাইয়ের পর অনুমোদন লাভ করে। বাস্তবায়িত হলে এটি হতো সামিট গ্রুপের দ্বিতীয় এফএসআরইউ প্রকল্প, যা দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট রিগ্যাসিফিকেশন করতে সক্ষম। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) অঙ্গীকার ছিল।

তবে, ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে পেট্রোবাংলা জানায় যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের এই প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। এরপর সামিট স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যায় এবং সুনিশ্চিত হয় যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট-এর নির্ধারিত শর্তাবলীর পরিপন্থী। আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে সামিট গ্রুপ পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ সরকারকে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারও আহবান জানায়।

পেট্রোবাংলার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে জারি করা নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে যে, পূর্বনির্ধারিত ফরম্যাট অনুসরণ না করে সামিট এলএনজি ২-এর পরিবর্তে তার নিয়ন্ত্রণকারী স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড পারফরম্যান্স বন্ডটি (পিবি) জমা দিয়েছে। উপরন্ত এটি ৯০ দিনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা দেওয়া হয়নি।

জবাবে, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুরের খ্যাতনামা আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হারবার্ট স্মিথ ফ্রিহিলস এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বলেন, ইতিপূর্বে পেট্রোবাংলা পারফরম্যান্স বন্ড ব্যাংক গ্যারান্টি আকারে গ্রহণ করেছে, যার নিশ্চয়তা কোনো আকারেই কম নয়। তবুও, সৌহার্দ্যতার অংশ হিসেবে পূর্বের পারফরম্যান্স বন্ডের পরিবর্তে এসএলএনজি ২ আবার তার নিজ নামে একটি ব্যাংক গ্যারান্টি (আকারে পারফরম্যান্স বন্ড) জমা দিতে প্রস্তুত।
সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট ৩০ দিনের একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা প্রদান করে, যার মধ্যে কোনো শর্তের ব্যত্যয় হলে পেট্রোবাংলা সেই বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবে। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পেট্রোবাংলা কোনো আপত্তি তোলেনি। সামিট আইনজীবীদের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে যে, পেট্রোবাংলা যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাতিল করেছে তা চুক্তির পূর্বনির্ধারিত শর্তাবলীর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল আরও জানায়, টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী কোনো শর্ত ব্যত্যয় হলে, উভয় পক্ষের মধ্যে যেকোনো পক্ষ নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে সেই বিষয়ে লিখিত নোটিশ দিতে পারত। কিন্তু পেট্রোবাংলা সেটি করেনি। ফলে এই কারণবশত চুক্তি বাতিলের অধিকার পেট্রোবাংলার আর নেই।

পারফরম্যান্স বন্ড জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২৮ জুন ২০২৪। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সুস্পষ্ট করে জানাতে চায়, ২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ওইদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল আর সেই কারণে পারফরম্যান্স বন্ডটি পরবর্তী ব্যাংকিং দিবস অর্থাৎ ৩০ জুন ২০২৪ (রোববার) তারিখে জমা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত দিন যদি সংশ্লিষ্ট অফিস বন্ধ থাকে, তাহলে পরবর্তী কর্মদিবসে ওই কাজটি করা হলে, কাজটি যথাযথভাবে সম্পাদন হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।

এসএলএনজি-২ ইতিমধ্যে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে, যার মধ্যে লং লিড আইটেম, মেটওশান ও ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা, এবং প্রকল্প সম্পর্কিত প্রশাসনিক ও আইনি কার্যক্রম সংক্রান্ত ব্যয় রয়েছে।

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি অবকাঠামোর জরুরী প্রয়োজন রয়েছে, যার মধ্যে তৃতীয় এফএসআরইউ প্রকল্পটি অন্যতম। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যে কোনো বিলম্ব দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে এবং চুক্তির মর্যাদা রক্ষার্থে, আমরা বিনীতভাবে টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্ট বাতিলের অবৈধ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।”

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল আরও বলেছে, “সামিট গ্রুপ, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বৃহত্তম বেসরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। দায়িত্বশীল এবং স্বচ্ছতার সাথে দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সামিটের অভিজ্ঞতা প্রমাণিত। বাংলাদেশে এফডিআই বৃদ্ধিতে সামিটের বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আমরা আবারও বিনীতভাবে বাংলাদেশের সরকারকে চুক্তির শুদ্ধাচার রক্ষার আহ্বান জানাই এবং বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করছি।”

আরবি/জেডআর

Link copied!