ঢাকা বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ শতাংশ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ শতাংশ

ফাইল ছবি

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণের প্রতিশ্রুতি দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১ শতাংশ। 

প্রতিশ্রুতি কমার পাশাপাশি আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে অর্থছাড়। অন্যদিকে বেড়েছে সুদ আসলসহ ঋণ পরিশোধের চাপ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ এসেছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে গেছে আগের ঋণ পরিশোধে, যা দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে আরও চাপ তৈরি করেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২.২৯৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৯৮৯ বিলিয়ন ডলার। বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থছাড় হয়ে যায়। এরপরও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের অর্থছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৩.৫৩২ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.০৬ বিলিয়ন ডলার। 

এদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও আগের নেওয়া ঋণের কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ১.৫৬৭ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ পরিশোধ বাড়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক বড় প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় আসল পরিশোধ শুরু হয়েছে। আবার বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহারের কারণে সুদ পরিশোধও বেড়েছে।

অন্যদিকে সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পের মতো বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নেও গতি কমেছে নতুন সরকারের সময়ে। যেমন মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বেশকিছু বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পেরও ঠিকাদার চলে গেছে। 

এ প্রকল্পের মতো অনেক প্রকল্পেই নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়েছে। অনেক প্রকল্পে বৈদেশিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও চলে গেছে। আবার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন স্থবির হওয়ার ফলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমেছে। এসব কারণে বাস্তবায়ন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থছাড় কমেছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নতুন প্রকল্পে চুক্তি হচ্ছে ধীরগতিতে।

ইআরডি সূত্রে জানিয়েছে, এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৩৩৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬৮ কোটি ডলার বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে সরকারকে এত ঋণ পরিশোধ করতে হয়নি। 

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল সরকার। মূলত সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত অর্থবছরে শুধু সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪১ কোটি ডলার। 

কারণ বাংলাদেশকে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জহিদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। 

তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি দেশের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি না পায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নত না হয়, তবে ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ একটি অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!