ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রপ্তানি আয়ে সুবাতাস

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। টানা চার মাস ধরে চার বিলিয়ন মানে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৪৪৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। 

এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।

তবে চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

কিন্তু রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি যেহেতু তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে, সেহেতু এই খাতের রপ্তানির ওপরই নির্ভর করে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি।

এই খাতে জানুয়ারি মাসের রপ্তানিতে ৫ দশমিক ৫৭ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও এর কাছাকাছিই রয়েছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে গত জুলাই ও আগস্টে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছিল।

সেপ্টেম্বরে অবশ্য ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়; রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

তার মধ্যে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও নভেম্বরে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। আর ডিসেম্বরে ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।

শুধু জানুয়ারিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৬৬ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

রপ্তানি গন্তব্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলে বিক্রি বাড়া এবং প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলো শ্রম অস্থিরতা থেকে স্থিতিশীল হওয়ার ফলে অন্য দেশে চলে যাওয়া কিছু অর্ডার আবার ফিরে আসা মূলত এই দুটি কারণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।

টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির অর্থ হলো বাংলাদেশে আসা কার্যাদেশ বেড়েছে।

এ সময় নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ছয়টি উৎপাদন ইউনিটের সবকটিই পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়েছে। রাকিব পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা দেশগুলোয় বড়দিন, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ইংরেজি নববর্ষ, থ্যাংকস গিভিং ও বক্সিং ডে’র কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতকিছুর মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে দুই অঙ্কেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে অস্থিরতা ও অসন্তোষের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, জুলাই-আগস্টকে কেন্দ্র করে কিছুটা হলেও উৎপাদন গতি কমেছে।

এর মধ্যে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরে আসা আমাদের প্রবৃদ্ধির বড় কারণ।

এদিকে রপ্তানিতে আবার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

জানুয়ারিতে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে ৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া শুধু জানুয়ারিতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে পৌনে ৫ শতাংশ কম।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক, ওষুধ এবং চামড়াসহ ২৭ ধরনের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়েছে।