বিশ্ববাণিজ্যে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে চলমান লড়াই বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শুল্ক দ্বন্দ্বের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে।
তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধার কারণে বাংলাদেশি পণ্য পশ্চিমা বাজারে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের তুলনায় সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হবে। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি বাড়বে, অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার সম্ভাবনা বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন ও মেক্সিকো একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বিশ্ববাণিজ্যে কিছুটা ক্ষতি করতে পারে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌলিক চাহিদার পণ্য, যেমন তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে এই প্রভাব কম হবে, এবং তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। বাংলাদেশ কম শুল্ক সুবিধা নিয়ে বিদেশি বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে, যা এফডিআই বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিও বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বড় দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি এবং এফডিআইয়ের জন্য বড় সুবিধা তৈরি করবে। তবে তিনি সতর্ক করেন, যদি বাংলাদেশ আইনগত বাধা দূর করতে না পারে এবং প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার না হয়, তবে এই সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে।
তার মতে, পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) যদি উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করা যায় এবং এক ছাদের নিচে সমস্ত সেবা নিশ্চিত করা যায়, তবে বাংলাদেশের জন্য এই সুযোগ কাজে লাগানো সহজ হবে।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। এই পণ্যটি বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে, চীনের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ৯ শতাংশের কিছু বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ব শুল্ক লড়াইয়ের কারণে বাংলাদেশ আরও বেশি রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হবে।
বিশ্ব শুল্ক যুদ্ধের কারণে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি হলে, তাদের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শুল্ক হারের সুবিধা নিয়ে এসব দেশ তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী দামে পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
তবে, উদ্যোক্তারা সতর্ক করেছেন যে, শুল্ক সুবিধার সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দেশের নীতিগত অবস্থা এবং খাতে সঠিক কৌশল প্রয়োজন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বা অন্য যেকোনো নীতিগত পরিবর্তন উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
তাই সঠিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন করতে হবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা এবং নতুন বিনিয়োগের দিকে মনোযোগী হতে হবে, যাতে আগামীদিনে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।