আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বেআইনি ড্যাপ সংস্কার এবং ইমারত বিধিমালা চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিহ্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন “বৈষম্যমূলক ও ক্রটিপূর্ণ ড্যাপ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ক্ষোভে ফুসসে ঢাকাসহ বড় বড় শহুরগুলোর জমির মালিকরা। আমরা রিহ্যাব এর পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে এই বৈষম্যমূলক ড্যাপ এবং নির্মাণ বিধিমালা নিয়ে অসংখ্যবার সভা করেছি, চিঠি দিয়েছি, নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ড্যাপ এবং নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করবেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা অনেক দিন ধৈর্য ধরে ছিলাম। অন্য সংস্থা বা সংগঠনের মত আমরা রাস্তায় আন্দোলন না করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিব্রত না করে সহিষ্ণুতার সাথে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের পিঠ একেবারে দেয়ালে ঠেকে গেছে। নানা ছলচাতুরি করে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে ড্যাপ ও নির্মাণ বিধিমালার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে বলতে চাই, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন ধরনের কোন সময় ক্ষেপন এবং টালবাহানা চলবে না। এই সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে জমির মালিকসহ সব অংশীজনদের সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে। আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।”
সংবাদ সম্মেলেন আবাসন খাতের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, সব কিছু বিবেচনা করে এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞগণ এবং সরকার অনেক যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ জারি করেন। সেখানে খাল-বিল জলাশয় সংরক্ষণ এবং রাস্তা প্রশস্থ করণের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নতুন ড্যাপের কারণে ঢাকা মহানগরের ৮০ শতাংশ অপরিকল্পিতই থেকে যাবে। শহর এমন একটা মরন ফাঁদে পরিনত হতে যাচ্ছে যাহাতে ফার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ভূমি মালিকগণ ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে মহল্লার রাস্তাগুলো অপ্রস্থই থেকে যাচ্ছে এবং ফাঁকা জায়গা/ সেমিপাকা জায়গা/পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনগুলো অস্বাস্থ্যকরই থেকে যাচ্ছে। এক কথায় ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ এরিয়াকে অপরিকল্পিত রেখে নগরবাসীকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে ভবনের আয়তন এবং উচ্চতা কমেছে ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কৃষি জমি। রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে ফ্ল্যাড ফ্লো জোন, জলাশয় (ওয়াটার বডি) দ্রæত ভরাট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা নিশ্চুপ হয়ে আছেন। এই ড্যাপে জলাশয় আইন এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছে, ২০ ফুট রাস্তা প্রসস্থ করণের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক এলাকায় আবাসিক ব্যবহার অর্থাৎ মিশ্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে শুদ্ধ আবাসিক এলাকা চাইলেও তৈরি করা সম্ভব না। নানা কারণে এই ড্যাপ বেআইনী। এই জন্য এই বেআইনী ড্যাপ অতি দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানান ।
সংবাদ সম্মেলনে নানা ধরনের সাংঘর্ষিক বিষয় তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় “বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫)” টি তার পূর্বসূরী “কাঠামোগত পরিকল্পনা” অর্থাৎ "ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান" গেজেট করার পূর্বেই চূড়ান্ত করা হয়েছে যা পরিকল্পনা প্রণয়নের মৌলিক মানদন্ডের সাথে সাংঘর্ষিক। টাউন ইম্প্রুভমেন্ট এ্যাক্ট, ১৯৫৩ এর ৭৩ ধারার অধীনে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রথমে সরকারের বিবেচনাধীন কাঠামোগত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর যথাযথ ধারাবাহিকতায় বিদ্যমান আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞ ও জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে, রাজউকের আওতাধীন এলাকার জন্য ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা’বা "ড্যাপ" চূড়ান্তকরণ করাই ছিল যৌক্তিকভাবে প্রত্যাশিত। ড্যাপে প্লাবনভূমিকে শ্রেণিবিভাগ করার সময় ২০০০ সালের ৩৬ নং আইনে প্রদত্ত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তৎপরিবর্তে “মুখ্য জলস্রোত”,“সাধারণ জলস্রোত” ও “সাধারণ প্লাবনভূমি ” হিসেবে বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে শ্রণিবিভক্ত করার কোন সুযোগ ২০০০ সালের ৩৬ নং আইনে নেই। এ সকল অঞ্চলে শর্তসাপেক্ষে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও স্থাপনা অনুমোদনের প্রস্তাবনা, আইন, আদালতের আদেশ ও জনস্বার্থ পরিপন্থী
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট-২, মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ইঞ্জি. আব্দুল লতিফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, রিহ্যাব পরিচালক প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্, রিহ্যাব পরিচালক দেওয়ান নাসিরুল হক, মোঃ কামরুল ইসলাম, এ.এফ.এম.উবায়দুল্লাহ, ড. মোঃ হারুন অর রশিদ এবং মোঃ আইয়ুব আলী উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :