বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

টানা চার মাস ধরে রেমিট্যান্সের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম

টানা চার মাস ধরে রেমিট্যান্সের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। টানা চার মাস ধরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। 

সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪০ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিটেন্স পাঠানোর দেশ হিসেবে শীর্ষ দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইতালি, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুর ও বাহরাইন। 

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে, তখন রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। 

একই সঙ্গে বাংলাদেশ যদি বৈদেশিক শ্রমবাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে চায়, তবে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ ও দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রবণতা বাড়ানোই হবে ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪০ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। এছাড়া সৌদি আরব ২৭ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ২৪ কোটি ৯৫ লাখ, মালয়েশিয়া ১৫ কোটি ৪৫ লাখ, কুয়েত ১৩ কোটি ৫৯ লাখ, ইতালি ১৩ কোটি ১০ লাখ, ওমান ১২ কোটি ৬৯ লাখ, কাতার ৯ কোটি ৬৪ লাখ, সিঙ্গাপুর ৬ কোটি ৪৮ লাখ, বাহরাইন ৪ কোটি ৩৭ লাখ, দক্ষিণ আফ্রিকা ২ কোটি ৭৬ লাখ, ফ্রান্স ২ কোটি ৬১ লাখ, দক্ষিণ কোরিয়া ১ কোটি ৫৬ লাখ, জার্মানি ১ কোটি ৫০ লাখ, কানাডা ১ কোটি ৩২ লাখ, অস্ট্রেলিয়া ১ কোটি ২৭ লাখ, গ্রিস ১ কোটি ১৯ লাখ, জর্ডান ১ কোটি ১০ লাখ, পর্তুগাল ৯৪ লাখ, স্পেন ৮৮ লাখ, মালদ্বীপ ৮৮ লাখ, জাপান ৫৭ লাখ, ব্রুনাই ৫৭ লাখ, পোল্যান্ড ৪২ লাখ, ইরাক ৩৯ লাখ, সুইডেন ৩৭ লাখ, লেবানন ৩২ লাখ ও ফিনল্যান্ড থেকে ৩০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘পশ্চিমের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি আমাদের দেশের জন্য ভালো দিক। তবে আমার ধারণা, সম্প্রতি প্রবাসীদের সঞ্চয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ইউএস ও ইউকে থেকে ইনভেস্টমেন্ট আসছে। কিন্তু আরবের দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ নয়, বরং শ্রমিকদের রেমিট্যান্স আসে। সব মিলিয়ে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে। এটা ফরেক্স মার্কেটকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।’

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬৮টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। দেশটিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ৬২ শতাংশ। একক বছরে কোনো দেশের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যা। শুধু ডিসেম্বরেই সৌদি আরবে ৮৬ হাজার ৮৬৬ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন, যা ৪৭ মাসের মধ্যে মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নিয়োগ। 

সর্বশেষ তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে দেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ জন, কুয়েতে ২ হাজার ৯০৩ জন, মালয়েশিয়ায় ২৭৬ জন, কাতারে ৫ হাজার ৮৯২ জন, জর্ডানে ১ হাজার ৪৯৩ জন, সিঙ্গাপুরে ৪ হাজার ৭৯৩ জন, জাপানে ৯৯ জন, ইতালিতে ১২২ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৭২ জন, যুক্তরাজ্যে ৮৭ জন কর্মী গেছেন। বিএমইটির তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে সৌদি আরবে নারী কর্মী গেছেন ৪ হাজার ৪৭৭ জন। এ ছাড়া জর্ডানে ১ হাজার ৩২৭ জন, কাতারে ২০৭ জন, কুয়েতে ৩১, যুক্তরাজ্যে ৩০, জাপানে ১৭ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!