কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ছে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১১:০৫ এএম

কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ছে

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের আগে প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য ব্যাংক, এমএফএস, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এমন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ১০ টাকায় খোলা কৃষকের অ্যাকাউন্ট। এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের হিসাব বেড়ে এখন ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৭। তবে একই সময়ে অতিদরিদ্রদের হিসাবও কমেছে প্রায় ১৬ হাজার। 

জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রথমে কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অতিদরিদ্র, মুক্তিযোদ্ধা, পোশাক ও চামড়াশিল্পের কর্মী, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দরিদ্র মানুষের জন্য খুবই অল্প টাকা জমার মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

এ ধরনের অ্যাকাউন্ট ‘বিশেষ হিসাব’ নামে পরিচিত। এসব হিসাবে কোনো লেনদেন না হলেও কিংবা কোনো টাকা জমা না থাকলেও হিসাব চালু থাকার কথা। এ ছাড়া এ ধরনের হিসাব বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা ও উৎসাহ দেওয়া হতো। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে কৃষকের হিসাবসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৭, ২০২৩ সাল শেষে যা ছিল ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ১৭৬টি। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কৃষকের হিসাব বেড়েছে ২ লখ ৬০ হাজার ৭৫১টি। 

আর পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের শেষে ছিল ৯০ লাখ ৪৭ হাজার ৭২৪টি। গত পাঁচ বছরে কৃষকের অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার ২০৩টি। গত বছর শেষে কৃষকের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শহরাঞ্চলে। গত ডিসেম্বর শেষে শহরে কৃষকের ব্যাংক হিসাব দাঁড়িয়েছে ৭৫ লাখ ২২ হাজার ৫২৮টি। 

অন্যদিকে গ্রামে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৯টি। কৃষকের ব্যাংক হিসাব বাড়লেও অতিদরিদ্রের হিসাব কমেছে। আগের বছরের ২৫ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৪ থেকে অতিদরিদ্রদের হিসাব কমে গত ডিসেম্বর শেষে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৬৬তে নেমেছে। এখান থেকে পাঁচ বছর আগেও এ ধরনের হিসাব ছিল ২৬ লাখ ২৩ হাজার।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ১০ টাকায় খোলা কৃষক অ্যাকাউন্টে কোনো সার্ভিস চার্জ নিতে পারে না ব্যাংক। এর মানে, এ ধরনের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে কোনো আয় আসে না, যে কারণে কখনোই এ ধরনের হিসাবে ব্যাংকগুলোর তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তদারকির ফলে  হিসাব এখন আবার বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি কমেছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। গত ডিসেম্বর শেষে এ ধরনের হিসাব বেড়ে ১ কোটি ২ লাখে উঠেছে, ২০২৩ সাল শেষে যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৯টি। 

এক বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ২ লাখ। আর ২০২০ সাল শেষে ছিল ৯৩ লাখ ১০ হাজার। সব মিলিয়ে বিশেষ হিসাবের সংখ্যা গত ডিসেম্বর শেষে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আগের বছর শেষে ছিল ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার। 

জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল (এনএফআইএস) বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক ছাড়াও আনুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেন হয় এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট থাকলে চলবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সেবা সহজীকরণ ও আর্থিক শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান। 

এ ছাড়া বর্তমানে একই ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টের কারণে দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেশি। আসলে কত শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের অ্যাকাউন্ট আছে, তা চিহ্নিত করতে একটি সেন্ট্রাল ডেটাবেজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নের মধ্যে কম টাকায় খোলা কৃষক ও অতিদরিদ্রদের অ্যাকাউন্ট কেন কমছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!