ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ডিসেম্বরে বিদেশে কার্ডে সর্বোচ্চ লেনদেন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:২৯ এএম
ফাইল ছবি

গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে লেনদেন করেছেন ৮৩৪ কোটি টাকা, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এ লেনদেন তার আগের বছরের ডিসেম্বরের লেনদেনের তুলনায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ কম। ২০২৩ সালের একই মাসে কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা লেনদেন করেছিলেন ৯২৯ কোটি টাকা। 

দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের করা এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। ডিসেম্বরে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশিরা লেনদেন করেছেন ৪৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

[34643]

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ওই মাসে দেশে সব ধরনের কার্ড লেনদেন ব্যাপকভাবে কমে। ওই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আগস্ট মাসে বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমার মূল কারণ সরকার পতনের পর দেশজুড়ে অস্থিরতা, কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং আর্থিক খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছিল। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকরা খরচের রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে ব্যাংকও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ফলে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে পতন হয়েছে। 

[34632]

তিনি বলেন, ডিসেম্বরে এসে দেশের ভেতরে ও বাইরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেশ পরিমাণে বেড়েছে, যা ইতিবাচক দিক। কারণ এ মাসে ব্যাংকগুলো নানা অফার দেয় এবং বিদেশে বাংলাদেশিরা বেশি যান। তবুও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বরে কার্ডে বিদেশে লেনদেন কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা কম পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর অন্যতম কারণ হলো- ভারত থেকে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতা না থাকলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেশি হতো।

[34637]
কোন দেশে কত খরচ করছে বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের নভেম্বরের দেশভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। টাকার অঙ্কে ৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে ৬৪ কোটি, সিঙ্গাপুরে ৪১ কোটি, ভারতে ৪০ কোটি, যুক্তরাজ্যে ৩৩ কোটি, মালয়েশিয়ায় ৩৪ কোটি, সৌদি আরবে ২০ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১ কোটি, কানাডায় ২০ কোটি, নেদারল্যান্ডসে ২০ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১৫ কোটি ও আয়ারল্যান্ডে ১৩ কোটি টাকা। 

[34631]
বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে। টাকার অঙ্কে ১৫৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুচরা দোকানে ৮২ কোটি, ফার্মেসিতে ৪৮ কোটি, পরিবহন খাতে ৪৫ কোটি, পোশাক কেনায় ৩৮ কোটি, ব্যবসা সেবায় ৩৭ কোটি, প্রফেশনাল সেবায় ২৬ কোটি, সরকারি সেবায় ২২ কোটি, নগদ উত্তোলনে ২২ কোটি ও ইউটিলি সেবায় ১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। 

[34648]
দেশের অভ্যন্তরে কার্ডে লেনদেন ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দেশের অভ্যন্তরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫ কোটি টাকা, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে বছরের জুনে এর পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত জুন থেকেই লেনদেনের পরিমাণ ৩৪ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ছিল। 

ডিসেম্বরে এসে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট কিছুটা কমে আসায় লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সর্বাধিক হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে, যা মোট লেনদেনের ৩৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া নগদ উত্তোলন ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং পরিবহন খাতে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতগুলোয় সম্মিলিতভাবে ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এ ধরনের লেনদেন হয়েছে।