অপ্রচলিত বাজারগুলোয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আশা জাগাচ্ছে। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে জাপানে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।
সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক, ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলিসহ কয়েকটি দেশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপ্রচলিত বাজারগুলোয় বাংলাদেশের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে রপ্তানি বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। তবে এসব বাজারে প্রবেশের জন্য স্থানীয় ভোক্তাদের রুচি ও পোশাকের ধরন সম্পর্কে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।
কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করে পণ্য উৎপাদন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাত একটি স্থায়ী বাজার তৈরি করতে পারে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৫১২ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৮৩ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার।
ভারতে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪২৭ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে রপ্তানি বাড়লেও কমেছে রাশিয়ায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ১৮৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০৯ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান। দেশটি গুণগত মানের পোশাকের জন্য ভালো মূল্যও প্রদান করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত জাপানে সর্বোচ্চ ৭২১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৭৮ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার।
অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তুরস্ক। দেশটির বাজার ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশি পোশাকের জন্য একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠছে। তুরস্কে গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৯১ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ৩৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে।
এ ছাড়া মেক্সিকোয় রপ্তানি প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন থেকে ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৮ মিলিয়ন ডলারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬২ দশমিক ১২ মিলিয়ন থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারে।
চিলিতে ৮৩ দশমিক ৫৩ থেকে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলারে। আর ব্রাজিলে রপ্তানি ৮৪ মিলিয়ন থেকে ৩১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১০ মিলিয়ন ডলার।
তবে অপ্রচলিত বাজারের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি কমার চিত্রও দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, আরব-আমিরাত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যে চলমান উত্তেজনা প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করছে, যা বাংলাদেশের লাভজনক হতে পারে।
আমরা যদি প্রয়োজনীয় উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারি, পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে বিনিয়োগের ওপর মনোযোগ দিতে পারি তাহলে তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’
আপনার মতামত লিখুন :