দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওয়ায় আনতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল এজেন্ট ব্যাংকিং। যত দিন যাচ্ছে, আরও জনপ্রিয় হচ্ছে এই খাত। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন তথা টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলনের জন্য সাধারণ মানুষকে এখন আর জেলা কিংবা উপজেলা শহরে যেতে হয় না।
হাতের নাগালেই পাচ্ছেন ব্যাংকিং সুবিধা। সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ও উত্তোলন করতে পারছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট ও আউটলেট থেকে ঋণসুবিধাও পাচ্ছেন। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং সব সূচকেই বেড়েছে। এর মধ্যে হিসাব বেড়েছে প্রায় ৬ লাখ আর আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ১০৯টি। আর তিন মাস পর অর্থাৎ, ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ২৩০। সেই হিসাবে তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১২১টি।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৫২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৫৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সেই হিসাবে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংক এই সেবা দিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও নিয়ে গেছে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সহজ করতেই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। এটা এখন সারা দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাধারণ মানুষ হাতের কাছে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছেন।
এমনকি সাধারণ মানুষ এখন এসব এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণও নিতে পারছেন। প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণের স্থিতি বেড়েছে ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
তথ্যানুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে প্রবাসী আয় আসার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ বেড়েছে ৭ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময় গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ১১ হাজার ৭০৭ জন। এছাড়া, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১ কোটি ১৯ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৫। তার আগের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও নারী গ্রাহক ছিলেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ৮৪৬ জন।
তিন মাসে নারী গ্রাহক বেড়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৯ জন। এসব গ্রাহকের হিসাব খোলার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংক। মোট গ্রাহকের ৭০ লাখ ৫৪ হাজার ১৪৮টি হিসাব খোলা হয়েছে ব্যাংকটিতে।
এরপর ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে হিসাব খোলা হয়েছে ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ১৭টি। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব খোলা হয়েছে ৪১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ লাখ ৬১ হাজার ৫১৪টি হিসাব খোলা হয়েছে। এছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৩টি হিসাব খোলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১১। আর ডিসেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২১। সেই হিসাবে তিন মাসে এজেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ১০। এছাড়া, সেপ্টেম্বর শেষে আউটলেটের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৩৬৭। আর ডিসেম্বর শেষে আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৪৮। সেই তিন মাসে আউটলেট কমেছে ১১৯টি।