ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নেতিবাচক ধারা থেকে ইতিবাচক অর্থনীতি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৮:৪৯ এএম
ফাইল ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলারের বিনিময় হার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। যার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ৩০ বিলিয়ন ছাড়াবে। অন্যদিকে রপ্তানিও বাড়ছে। সব সম্ভব হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে।

একই সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক হয়েছে। আর্থিক হিসাবের ঘাটতি কমেছে। মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে এবং আরও কমবে। ট্রেজারি বিল, বন্ডের সুদহার কমতে শুরু করেছে। সাড়ে ১২ শতাংশে উঠা সুদহার এখন সাড়ে ৯ শতাংশে নেমেছে। পুরোপুরি ফল পেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তার উত্তরণ ঘটছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অর্থনীতি অনেক ভালো বলে সম্প্রতি দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

সেই প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সব মিলিয়ে সরকার পরিবর্তনের পর রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। অনেকেই ডলারের দর ১২২ টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে তা আরও উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। 

রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, উচ্চ সুদের কারণে দেশে বিনিয়োগ আসেনি, এটা ঠিক নয়। দেশের বিনিয়োগ না বাড়ার প্রধান কারণ ছিল আমানতে কম প্রবৃদ্ধি। মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মানে এক বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা আমানত বাড়ছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা সরকার নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। 

তিনি বলেন, ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে এখন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। আমরা বলেছি, ৯০ হাজার কোটি টাকা নিতে। ফলে আগামীতে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে। ব্যাংকগুলোর এমডিরা ঘুমিয়ে থেকে মুনাফা করার দিন শেষ হয়ে আসছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণ দিয়ে আয় করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার না কমালেও সুদহার কমবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের যে ক্ষত হয়েছে, সেখানে বড় ধরনের নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এরই মধ্যে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্টের খসড়া করা হয়েছে। আমানতকারীদের শতভাগ নিরাপদ করে দুর্বল ব্যাংক পুনঃমূলধনীকরণ করা হবে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংক থেকে ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা একটি পরিবার নিয়েছে। তার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানুষের আস্থার কারণে। তারা প্রচুর আমানত পাচ্ছে। এরই মধ্যে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে।

ডলারের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, দুবাই-আমেরিকা থেকে ডলারের দর নির্ধারণ হবে না। আমরা যে দর দেব, সেই দরেই ব্যাংকগুলো ডলার কিনবে। এখন খোলাবাজারে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো দিচ্ছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যোগ হয়ে পাচ্ছে ১২৪ টাকা। এর মানে ব্যাংকে বেশি দর পাচ্ছে। ধীরে ধীরে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করব। তবে সেটা এখনই নয়।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ফেরানো অবশ্যই সম্ভব। মালয়েশিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া অনেক দেশ টাকা ফেরত এনেছে। তবে এ জন্য ৫ বছর সময় লেগেছে। আমরা কেন আশা করব না। অবশ্যই চেষ্টা করব। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। অনেক যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। দু-এক বছরে এটা হবে না। পরবর্তী সরকার যেন সঠিক পথে নিয়ে যায়। এটা যদি কন্টিনিউ না থাকে, তাহলে সফলতা আসবে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যে হয়তো পাচারকারীদের সম্পদ জব্দ করা সম্ভব হবে। মামলা করে অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত ৫ বছর লাগবে। পরবর্তী সময়ে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক এ উদ্যোগ যেন থেমে না যায়। গত বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, দেশের অর্থনীতি সবসময় চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে গেছে। তবে বর্তমানের মতো সব দিক থেকে একবারে এত চ্যালেঞ্জ কখনো আসেনি। শ্রীলঙ্কায় শুধু বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) সংকট তৈরি হয়েছিল। এখানে বিওপি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব, দুর্বৃত্তায়নের কারণে ব্যাপক অর্থ পাচার হয়েছে। 

আশার বিষয় হলো- বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাব বড় ধরনের নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক হয়েছে। আর্র্থিক হিসাবের ঘাটতি কমেছে। মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে। আরও কমবে। ট্রেজারি বিল, বন্ডের সুদহার কমতে শুরু করেছে। সাড়ে ১২ শতাংশে উঠা সুদহার এখন সাড়ে ৯ শতাংশে নেমেছে। এর মানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি কাজ করতে শুরু করেছে। পুরোপুরি ফল পেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে।