স্বাস্থ্য শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

স্বাস্থ্য শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে

ফাইল ছবি

আবারও উপেক্ষিত হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, সেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বরাদ্দই সবচেয়ে কমানো হচ্ছে। ছেঁটে ফেলা হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে ৫৯ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতের বরাদ্দ থেকে ৩৫ শতাংশ। 

এই দুই খাতসহ প্রায় সব ধরনের খাতের এডিপিতে বরাদ্দ কেটে নেওয়ার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। একমাত্র ব্যতিক্রম পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন খাত। এ খাতে উলটো এডিপির মূল বরাদ্দের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তখন সংশোধিত এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। এরপর গত বছরের মে মাসে শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল।

বাজেট দেওয়ার পর অভ্যুত্থানে পতনের আগে এক মাস হাতে পেয়েছিল ওই সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারও অর্থবছরের শেষ ভাগে এসে এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে মূল বরাদ্দ থেকে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ কমছে। 

সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের তৈরি এ সংশোধন প্রস্তাব গত  রোববার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের সংশোধনী প্রস্তাবে আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি ৫৯ বরাদ্দ কেটে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাত থেকে। মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে ওই বরাদ্দ থেকে ১২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা কেটে নিয়ে ৮ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 একইভাবে শিক্ষায় বরাদ্দ ৩৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খাতটি থেকে ১১ হাজার ১৮০ কোটি টাকা কেটে নিয়ে ২০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধিত এডিপিতে। মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

এদিকে সংশোধিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত থেকে ২২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ এবং শিল্প খাত থেকে ৩১ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

এ ছাড়া কৃষি খাত থেকে ২৭ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ২২ শতাংশ, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি খাত থেকে ২১ শতাংশ, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাত থেকে ১০ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এডিপিতে ব্যাপক কাটছাঁটের মধ্যে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সংশোধন প্রস্তাবে তা ৫৬১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

সংশোধিত এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। এরপরেই রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, ২১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এরপরই রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তাদের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। 

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিবেচনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা; রেল মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার ২২৮ কোটি টাকা; পানি সম্পদের জন্য ১০ হাজার ২১২ কোটি টাকা, নৌপরিবহনের জন্য ৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, সেতু বিভাগের জন্য ৫ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন যে প্রস্তাব তৈরি করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাত থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বা বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। 

আর বৈদেশিক সহায়তা বা বৈদেশিক ঋণের তহবিল থেকে প্রায় ৮১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা  বা ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ কেটে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মূল এডিপি বরাদ্দের উভয় খাত থেকে গড়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!