বাণিজ্যিক ব্যাংক খাত সংস্কারে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণের তাগিদ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

বাণিজ্যিক ব্যাংক খাত সংস্কারে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণের তাগিদ

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক খাত নানা ধরনের সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংক খাতের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক উদ্যোক্তা এবং শীর্ষ নির্বাহীরা মনে করছেন, যে কোনো ধরনের সংস্কারের আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তাদের মতে, ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়ে যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে সেগুলি বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, যে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতের তদারকি করছে, ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন যাতে আরও সফল হয়, এজন্য ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত শোনা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে তিনি মনে করেন, যে কোনো পদক্ষেপ বা নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা তো স্টেকহোল্ডার, দিনশেষে আমাদেরকেই এসব নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে।

বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। তার মতে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। 

তিনি আরও বলেছেন, এসব সংস্কার কার্যক্রমের জন্য একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা যেতে পারে, তবে যদি ওই কমিশনকে যথাযথ ক্ষমতা না দেওয়া হয়, তাহলে সেগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা যদি যথাযথ হয়, তবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা বা ভুল আর্থিক বিবরণী প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে দুই ধাপে পদক্ষেপ নিতে হবে – স্বল্পমেয়াদি সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার।

ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, টেকসই ও শক্তিশালী ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাত তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় দায়িত্ব রয়েছে। 

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও অতীতে অনেক ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এসব নীতিমালা অগ্রাহ্য করেছে, যা আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তবে তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত উন্নতির পথে যাচ্ছে।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমানও মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে এবং ব্যাংক খাতের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হবে।

সার্বিকভাবে, ব্যাংক খাতের সংস্কারে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!