ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

জমে উঠেছে পাড়া-মহল্লা ফুটপাতের ইফতার বাজার

এফ এ শাহেদ
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জীবনে অনন্য আমেজ সৃষ্টি করে। সারা বিশ্বের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারীর সঙ্গে বাংলাদেশেও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সিয়াম (রোজা) পালন হচ্ছে। সারা দিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতার করার আনন্দই আলাদা। 

এ উপলক্ষে ইফতার কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলু-ডিম চপ, কাবাব, কোফতা, রোস্ট, হালুয়া, গ্রিল-তন্দুরি থেকে বুট, বুন্দিয়া, জিলাপি, মাঠা, শরবত, বিভিন্ন ধরনের পাকোড়া।

 হরেক স্বাদের বিরিয়ানি, বোরহানি, মোরগ পোলাও থেকে শুরু করে বাহারি কাচ্চি, হালিম, কাবাব, নান রুটি, পরোটা, রোল, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি, দই-বুন্দিয়া, লাচ্ছি, ফালুদা থেকে টক দইয়ের ঘোল- কী নেই রাজধানীর বাহারি ইফতারির বাজারে। 

গতকাল সোমবার রমজানের ২য় দিনে রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে অলি-গলি-ফুটপাত- সবখানেই ছিল বাহারি ইফতারির পসরা। 

অলি-গলি-ফুটপাতের দোকানে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ রোজাদারের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। গাদাগাদি আর ঠেলাঠেলি করে ইফতারি কিনতে দেখা যায় বেশির ভাগ ফুটপাতের খাবার দোকানগুলো থেকে।

রাজধানীর নিউমার্কেট, চকবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বড় ইফতারের বাজার বসলেও এলাকাভিত্তিক নানা স্থায়ী ও অস্থায়ী ইফতারের বাহারি পদ নিয়ে অলি-গলি-ফুটপাতে দোকান বসানো হয়েছে। 

বেশির ভাগ মানুষ বাসায় তৈরি ইফতারকে প্রাধান্য দিলেও, কর্মজীবী মানুষেরা বিশেষত ব্যাচেলর বা ছোট পরিবারে থাকা ব্যক্তিরা বাজার থেকে ইফতার কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 

কেউ কেউ বাসার ইফতারে সঙ্গে বাইরে থেকে বিশেষ কোনো খাবার নিয়ে যান। আজিমপুর, লালবাগ, শনির আখড়া, নবাবগঞ্জ ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র। 

আজিমপুরের বাসিন্দা লতা আনাম বলেন, বাসায় বানানো খাবারই বেশি খাই, তবে মাঝে মাঝে জিলাপি, চপ বা হালিমের জন্য আসি। স্ত্রী ও এক সন্তানের ছোট পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন আসিক মাহবুব।

ঘরে ইফতার বানানো খরচ ও ঝামেলা মনে করেন বলে বাহির থেকে কিনে নিয়ে যান বলে জানান তিনি। ইফতার বানানোর সব জিনিসপত্রের দাম অনেক। বানাতেও তেল অনেক খরচ হয়। 

ছোট পরিবারে ঈদের ১০ দিন আগেই ফ্যামিলি গ্রামে চলে যায়। সব মিলিয়ে হিসাব করলে দৈনিক অল্প করে কিনে নিয়ে গেলেই ভালো হয় বলে জানান তিনি। 

ইফতারের জন্য এলাকার দোকানের ওপর নির্ভর করতে হয় জানিয়ে ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থাকা প্রান্তিক হোসেন বলেন, আমরা তো বানানো ইফতার করতে পারি না,  লোক নাই। তাই প্রতিদিন মেসের কারো না কারো দায়িত্ব পড়ে ইফতার নিয়ে যাওয়ার সে, জন্যই আসা।

লালবাগ  কেল্লার সামনে পসরা সাজিয়ে বসেছেন টং দোকানি আলতাফ হোসেন। তার কাছে আছে ১২ আইটেমের ইফতারসামগ্রী। যার মধ্যে মুড়ির প্যাকেট ৮০ টাকা (৫০০ গ্রাম), বেগুনি ৫ টাকা, আলু চপ ৫ টাকা, সবজি পাকোড়া ১০ টাকা, পেঁয়াজু ১০ টাকা, ডিম চপ ১০ টাকা, চিকেন সাসলিক ৩০ টাকা, টিক্কা ৩০ টাকা, ছোলা ২০০ টাকা কেজি, বুন্দিয়া ২০০ টাকা কেজি, জিলাপি (মোটা) ২২০ টাকা কেজি, জিলাপি (চিকন) ৩০০ টাকা কেজি।

নবাবপুর বাজারের ফুটপাতে বিশাল পসরা নিয়ে বসেছেন জনি মোল্লা। তার কাছে ছোলা (রান্না করা) ১৭০ টাকা কেজি, পেঁয়াজু ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, বেগুনি ৫ টাকা, চিকেন টিকা ১০ টাকা, জালি কাবাব ১৫ টাকা, বাঁধাকপির পাকোড়া ১০ টাকা, বুন্দিয়া ২০০ টাকা কেজি, জিলাপি (মোটা) ১৮০ টাকা কেজি ও চিকন জিলাপি ২৮০ টাকা কেজি। 

এভাবে পুরো লালবাগ থেকে নবাবগঞ্জ ফুটপাত ধরে অন্তত ৩০০ দোকান বসেছে। প্রতিটি দোকানে এক থেকে দেড়শ লোকের ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে যায়। 

শুধু ভাজাপোড়া নয়, এসব এলাকায় এক থেকে দেড়শ টাকার মধ্যে ডাব পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে সব ধরনের দেশীয় ও বিদেশি ফল এবং সবজি।

লালবাগ রয়েল হোটেলের সামনের রাত্রার ব্যস্ত চিত্র দেখাযায়। ইফতারির ক্রেতাদের সামলাতে সবাই ব্যস্ত সবাই। ফুটপাতের বিক্রেতারা জানান, ইফতারির ক্রেতার চাপ অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি। 

তবে শাহি বুন্দিয়া, শাহি জিলাপি, শাহি হালিম, হরেক রকমের কাবারের চাহিদাটা কিছু কমেছে। প্রতি কেজি বুন্দিয়া, শাহি জিলাপি এখানে ৩০০ টাকা। 

ইফতারি কিনতে আসা পুরান ঢাকার বাসিন্দা আলতাব হোসেন বলেন, মুরগির রোস্ট, ছোলা, পেঁয়াজু, বুন্দিয়া, জিলাপি কিনেছি। 

অনেক ঠেলাঠেলি করে ইফতারি কিনতে হয়েছে। দামও এবার বেশি। তবে আরও দু-এক দিন পর দাম কিছুটা কমবে আশা করছি। 

নাসির উদ্দিন নামের একজন দোকানি বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। তাই এর চেয়ে কমে তাঁরা বিক্রি করতে পারছেন না। তবু যাদের পছন্দ, তারা কিনছেনই।