বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যবসায়ীদের চাপে সুদহার কমানো হবে না। মূল্যস্ফীতি কমার পরই ধাপে ধাপে পলিসি রেট সমন্বয় করা হবে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, আমি চাই পলিসি রেট বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হোক। একেবারেই শিথিল করা হলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে না। ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, সব জায়গায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক নীতি সুদহার রয়েছে। আমাদেরও সে পথে এগোতে হবে।
তিনি বলেন, সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে। সময়মতো এটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীদের চাপে সুদহার কমানো হবে না। যখন মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি বিল ও অন্যান্য সুদহার কমবে, তখনই আমরা পলিসি রেট ধাপে ধাপে কমাবো।
গভর্নর আরও বলেন, আমরা ব্যাংকিং খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। বিশ্বব্যাংকও আমাদের বিশ্বমানের নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে।
তিনি জানান, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করতে পারবে না। পরবর্তী সরকার এ সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে গভর্নর বলেন, আমরা চাই না, গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দেওয়া হোক। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ জন্য ‘ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট’ (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে যারা পরিচালক আছেন, তাদের সবাইকে এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকেরা পরিচালক হবেন, না থাকলে হবেন না।
ব্যাংকের মালিকদেরও যাচাই–বাছাই করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।
গত ছয় মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো, বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে নেতিবাচক অবস্থা থেকে আর্থিক খাত ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো জরুরি। মাত্র ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফ-এর কাছে সহায়তা চাইতে হয়েছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, আমরা আশা করি, বাংলাদেশে কিছু রায় পাবে এবং বিদেশে কিছু সম্পদ আটকানো সম্ভব হবে। অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী, তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো সফলভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করেছে। আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :