২০২৪-২৫ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়, ৯০১ কোটি ৭ লাখ ডলার। আর এই সময়ে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে বান্দরবানে মাত্র ১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে প্রায় ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম (২৮ শতাংশ), সিলেট (৯ শতাংশ), খুলনা (৪.৫৯ শতাংশ), রাজশাহী (৩.৫৫ শতাংশ) ও বরিশাল (২.৮৮ শতাংশ) বিভাগ। আর সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসা দুই বিভাগ হলো ময়মনসিংহ (২ শতাংশ) ও রংপুর (১.৬৫ শতাংশ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসের পর থেকে প্রতি মাসেই প্রবাসী আয় বেড়েছে। জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল, যা বেড়ে আগস্টে ২২২ কোটি ৪২ লাখ ও সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার হয়েছে। অক্টোবর মাসে সামান্য কমে তা ২৩৯ কোটি ডলার হয়েছে। নভেম্বরে এসেছে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে যে পরিমাণ আয় আসছে, তার চেয়ে বেশি আসার কথা। কিন্তু অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেছেন, সে কারণে তা হচ্ছে না। তারা বরং উলটো দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এতে অর্থ পাচার বাড়ছে। গত বছরের বেশির ভাগ সময়ে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো ছিল না।
রেমিট্যান্সের সুবাতাসের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠানো কমেছে। এর বদলে অফিশিয়াল চ্যানেলে (ব্যাংকিং) ডলার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, রেমিট্যান্সে ডলারের দর বেড়ে যাওয়াই বড় কারণ। মাঝে রেমিট্যান্সের দর বেড়েছে, আবার কমেছে। এখন ডলারের টানা দর বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে।
আয়ে শীর্ষ পাঁচ জেলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলায় ৬০৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় ১৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ৯৯ কোটি ৩৯ লাখ, সিলেটে ৮৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার এবং নোয়াখালী জেলায় ৫৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে একই সময়ে। সব মিলিয়ে জুলাই-ফেব্রুয়ারি মোট প্রবাসী আয়ের ৫৪ শতাংশই এসেছে এই পাঁচ জেলায়।
কম আয় যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বান্দরবান জেলা। এই জেলায় আট মাসে এসেছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে একেবারে শেষ দিকে থাকা অপর চারটি জেলা হলো- লালমনিরহাট, রাঙামাটি, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও।
ঠাকুরগাঁওয়ে ২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে ২ কোটি ১০ লাখ, রাঙামাটিতে ১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও লালমনিরহাটে ১ কোটি ৬১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :