ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

কমেছে পণ্যমূল্যের উত্তাপ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বা পণ্যমূল্যের র্ঊধ্বগতি। দীর্ঘ ২২ মাস পরে খাদ্যপণ্যের সেই উত্তাপ সামান্য প্রশমিত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম নিন্মমুখী বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামীণ পর্যায়ে খাদ্য খাতে খরচ অনেক কমেছে।

সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ; যা গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম।

তবে সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। দীর্ঘ ২২ মাস পরে খাদ্যমূল্য কমেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের পর ফের মূল্যস্ফীতি ঘটে। তবে সর্বকালের সেরা আন্দোলনের মাস গত জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে।

সেই চিত্র থেকে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে খাদ্যের উত্তাপ অনেক কমে। সে সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এক মাস পরে ফেব্রæয়ারিতে উত্তাপ আরও কমে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ পয়েন্টে নামে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার চার মাস পর এক অঙ্কের ঘরে নেমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছিল, ফেব্রুয়ারিতে এসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গ্রামে বা শহরে গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও অসহনীয়। ধানের মওসুম এবং শীতের সবজিতে বাজার সয়লাব হলেও খাদ্যেপণ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নেিচ নামেনি। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি টানা তিন মাস মূল্যস্ফীতি কমে আসার মধ্যেও খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসে এসে এ হার এক অংকে নেমে এলো। মাসটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১১ মাস পর এ হার এখন দুই অংকের নিচে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্বিক মূল্যস্ফীতি মাসের ব্যবধানে এতটা কমে যাওয়ার কারণ নিন্মমুখী খাদ্য মূল্যস্ফীতি। শহর ও গ্রামে একই চিত্র মিলেছে। ফেব্রুয়ারিতে এসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে; যা জানুয়ারিতেও ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৩২ পয়সা। উল্টো খাদ্যবহির্ভূত খাতে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ; এক মাস আগেও যা ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। খাদ্যের দাম বড় রকমের কমার তথ্য মেলে শহরের খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতিতে।

এতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে শহরের খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে মূল্যস্ফীতি কমল ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট। অন্যদিকে গ্রামের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গ্রামে এর মধ্যে দশমিক ১২ শতাংশ পয়েন্ট খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ; জানুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। শহরে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ; বছরের প্রথম মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার পর দেশ হাল ধরে অন্তর্র্বতী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মুহাম্মদ ইউনূস মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু সরকার মূল্যস্ফীতির নিন্মমুখিতার তথ্য দিলওে নিত্যপণ্যের বাজারে সে অর্থে এখনো সুফল মেলেনি।