ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

৭ মাসে ১৪২ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ০১:১৯ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর হিড়িক পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১৪২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পেয়েছে, যার মধ্যে বাস্তবায়ন তদারকি ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ১৩৬টির মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রকল্প বাস্তবায়ন চিত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ গত মাসে পরিকল্পনা কমিশন এবং আইএমইডির কাছে ৫০টিরও বেশি নতুন প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি প্রক্রিয়াধীন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৪৫টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়, আগের অর্থবছরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ৪২৯ প্রকল্পের।

উন্নয়ন বিশ্লেষকদের মতে, যথাসময়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে জনগণ যেমন সুবিধা পেত, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ‘ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বৃদ্ধি’র অনুরোধ অনুমোদন করা মানেই শেষ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির দিকে ধাবিত হওয়া। 

এ ধরনের প্রস্তাবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতাকে বৈধতা দেয়। একই সঙ্গে বাড়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ। এসব প্রকল্প পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পাশাপাশি কী কারণে একই ধরনের প্রকল্পে বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এর সঠিক মূল্যায়ন জরুরি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সম্প্রতি বৃহত্তর ঢাকা টেকসই নগর পরিবহন প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও এক বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ২০১২ সালে শুরু এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এমনকি পরে প্রকল্পের কিছু অংশ বাদ দেওয়া এবং কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়ানোতে ব্যয় ১০৯ শতাংশ বেড়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ছয়টি অবকাঠামো প্রকল্পের সম্প্রসারণের অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং একনেক পর্যায়ক্রমে অনুমোদন প্রক্রিয়ার অধীনে এই প্রকল্পগুলো এর মধ্যে কমপক্ষে চারটি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯৫ শতাংশ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। এসব প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে শেষ করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়ে ব্যয় বাড়ে প্রায় ২৬ শতাংশ। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ৮০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। কাজের পরিধি পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে ৪৯ শতাংশ।

উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতির পেছনে ২৮টি কারণ খুঁজে পেয়েছে আইএমইডি। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা, দক্ষতার অভাবে অন্য প্রকল্পের ছক অনুসরণ করে নতুন প্রকল্প তৈরি, প্রকল্প গ্রহণে সুবিধাভোগীদের মতামত না নেওয়া, প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত না করা, এমটিবিএফের আর্থিক সীমা অনুসরণ না করা, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করেই প্রকল্প অনুমোদন। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব মো. মামুন আল রশিদ বলেন, ‘প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার বড় সমস্যা হচ্ছে- আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটা প্রথম বাধা। 

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, সেই প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণের এবং অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাঁদের কারিগরি জ্ঞান খুব সীমিত।’