সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক আয় অর্জন করতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকরা বিশ্বের ১৭২টি দেশে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যান, যাদের বেশিরভাগই শ্রম ভিসায় যান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫ মিলিয়ন প্রবাসী কর্মরত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা গড়ে প্রতি প্রবাসীর বার্ষিক রেমিট্যান্স ৩২০০-৩৫০০ ডলার।
বিশ্বজুড়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বাংলাদেশ প্রতি বছর ২০ লাখ আইসিটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে পারে এবং তাদের গড় মাসিক আয় ৩-৫ লাখ টাকা হয়, তবে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে। যদি এই জনশক্তি তাদের উপার্জনের ৪০% দেশে পাঠান, তাহলে বছরে বাংলাদেশ ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করতে সক্ষম হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ বছরের মধ্যে পরিকল্পিত দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানার ক্ষেত্রে পাঁচটি মূল কারণ গুরুত্বপূর্ণ:-
১. বৈশ্বিক চাহিদা: সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই, ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনবলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
২. উচ্চ আয় ও জীবনমান উন্নয়ন: প্রচলিত শ্রমশক্তির তুলনায় আইসিটি পেশাজীবীদের আয় বহুগুণ বেশি, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
৩. বিকল্প রপ্তানি উৎস: পোশাক শিল্পের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিকে রপ্তানি খাতে অন্তর্ভুক্ত করলে অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
৪. বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি: আইসিটি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সহজ হবে।
৫. উদ্যোক্তা মনোভাব বিকাশ: প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ব্লকচেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার সিকিউরিটি, এবং মেশিন লার্নিং-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেশজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারে, তবে আগামী ৫-১০ বছরে বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে দেশের অবস্থান সুসংহত হবে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ১.০২ কোটি যুবক বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এই তরুণদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা গেলে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আইসিটি খাতের নেতৃত্ব দিতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সময় লোক দেখানো প্রশিক্ষণ, সেমিনার আর সভার বাইরে গিয়ে বাস্তব দক্ষতা উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে যথাযথ পরিকল্পনা নিলে বাংলাদেশ আগামী দশকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান আইটি জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :