দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, যেখানে এসেছে ২৫৩ কোটি ডলার। তবে চলতি মার্চ মাসে এই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ৮ দিনে প্রবাসীরা ৮১ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯,৯৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ডলারের বেশি আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থপাচার কমেছে এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আকর্ষণও বেড়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম ৮ দিনে— রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে: ২৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার, বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে: ৬ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে: ৫১ কোটি ২৯ লাখ ডলার, বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে: ১৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
মার্চের প্রথম ৮ দিনে নয়টি ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স পায়নি। এগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক: সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক: হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি ব্যাংক
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রেমিট্যান্স এসেছে ১,৮৪৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫৫ কোটি ডলার বেশি।
অর্থবছরের বিভিন্ন মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল— জুলাই: ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্ট: ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবর: ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর (সর্বোচ্চ রেকর্ড): ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ার আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২.৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। গ্রস রিজার্ভ: ২৬.১৩ বিলিয়ন ডলার, আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ: ২০.৯০ বিলিয়ন ডলার, ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ: ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকার প্রয়োজন হয়, যা বর্তমানে নিশ্চিত রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকছে, যা দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্চে রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, যা দেশের জন্য নতুন মাইলফলক হবে।