ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

৪৫ ব্যাংকের আমানত বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম
ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। 

ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদহারও বেড়েছে। এ কারণে গ্রাহকরা আবার তাদের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরিয়ে আনছেন। 

এতে একদিকে বাড়ছে আমানত, অন্যদিকে ব্যাংকের বাইরে থাকা অর্থের পরিমাণ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের মোট ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ৪৫ ব্যাংকের আমানত বেড়েছে। তবে আমানতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ছিল সিটিজেন ব্যাংকের ৩৮.৯৭ শতাংশ। 

এ ছাড়া সীমান্ত ব্যাংক ৩৮.৩৫ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংক ৩৩.৩৮ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংক ২৮.৬১ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৭.৭৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংক ২৭.৪৭ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক ২৭.১৭ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক ২২.৬৮ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ২১.৫৬ শতাংশ, পূবালী ব্যাংক ২০.৫৭ শতাংশ, শাহ্জালাল ইসলামী ১৫.২১ শতাংশ এবং ব্যাংক এশিয়ার ১৫.০৪ শতাংশ আমানত বেড়েছে। 

এমনকি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যাওয়া ইসলামী ব্যাংকেরও আমানত বেড়েছে ৪ শতাংশ। ব্যাংকটির আমানত বেড়ে ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনযায়ী, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন আমানত সংগ্রহের জন্য ১০ শতাংশের কাছাকাছি সুদহার অফার করছে। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক যদি নতুন করে কোনো ঋণ বিতরণ নাও করে তার পরও বছর শেষে আমানত প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। কারণ আগের আমানতের সঙ্গে সুদ যুক্ত হয়ে মোট আমানত বাড়বে। ব্যাংকের ওপর আস্থা ফেরাতে কাজ করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।  দেওয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় অফার।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে মিডল্যান্ড, মেঘনা, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন, মধুমতী, এসবিএসি, প্রবাসী উদ্যোক্তাদের এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোয় সাধারণ সঞ্চয় রাখলে ২ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ সুদ পাবেন গ্রাহক। 

মেয়াদি আমানতে মিলবে ৪ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ। চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মেয়াদি আমানতের ওপরে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ দিচ্ছে গ্রাহকদের। 

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে এনআরবি ব্যাংক। তিন থেকে ছয় মাস সময়ের সুদ ৫ শতাংশ থেকে ১০.৫০ শতাংশ, ছয় মাস থেকে এক বছরের বেশি সময়ের জন্য ৬.৫০ শতাংশ থেকে ১০.৭৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ব্যাংকটি। তিন বছরের বেশি সময়ের আমানতের সুদ মিলছে ১২ শতাংশ থেকে ১৩.৪৬ শতাংশ। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসএবিসি) তিন মাস থেকে তিন বছর বা তার বেশি সময়ের ফিক্সড ডিপোজিটে ৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।

জানা গেছে, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত অর্থ নানা উপায়ে অনেকেই ঘরে রেখেছিলেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তাদের বেশির ভাগই পলাতক। ঘরে টাকা রেখে তাদের কেউ কেউ এখন বিপদে আছেন। নিরাপদবোধ না করায় বিভিন্ন উপায়ে তারা ভালো ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।

 আবার সরকার পতনের পর থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না মানুষ। এর কারণ, সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে দিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে ৩ লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ কারণে খারাপ অবস্থার ব্যাংক থেকে অনেকেই বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছে না।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে গত ১০ বছর আগে থেকে বলে আসছি এস আলমের ব্যাংকে আপনারা টাকা রাখবেন না। কিন্তু আপনারা টাকা রেখেছেন। তারা ২ শতাংশ সুদ বেশি দিয়েছে, আপনারা সেখানেই টাকা রেখেছেন, এখন ধরা খেয়েছেন। এখন আমরা আপনাদের উদ্ধার করব; কিন্তু এখনই সেটি পারা যাবে না। 

আমরা ধাপে ধাপে করব; সে জন্য সময় দিতে হবে। আমরা ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্টের দিকে যাচ্ছি, কিছু ব্যাংক একীভূত করতে হবে। অনেক কিছু করা যাবে, করা হবে। এ বছরই হয়তো অনেক কিছু করা হবে। এতটুকু বলতে পারি, আপনারা টাকা পান আর বন্ড পান, কিছু একটা পাবেন।’

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেইন বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে আমরা গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসতে দেখছি। এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে সার্বিক সংস্কার বাস্তবায়ন হলে আমাদের ব্যাংকিং খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’