ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ধাক্কা খেয়েছেন ইলন মাস্কসহ শীর্ষ ধনকুবেররা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ধাক্কা খেয়েছেন ইলন মাস্কসহ শীর্ষ ধনকুবেররা

ছবিঃ সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি। শপথ অনুষ্ঠানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস ও মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি জগতের দিকপালরা। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যেই বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন এই ধনকুবেররা।  

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের সম্পদের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির নতুন নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

 
২০৯ বিলিয়ন ডলার সম্পদ হারিয়েছেন শীর্ষ পাঁচ বিলিয়নিয়ার

ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, মার্কিন শীর্ষ পাঁচ ধনীর মোট সম্পদ ২০৯ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ইলন মাস্ক।  

ইলন মাস্ক (টেসলা, স্পেসএক্স) – ১৪৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে  
জেফ বেজোস (আমাজন) – ২৯ বিলিয়ন ডলার কমেছে  
সের্গেই ব্রিন (গুগল, অ্যালফাবেট) – ২২ বিলিয়ন ডলার কমেছে  
মার্ক জাকারবার্গ (মেটা) – ৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে  
বার্নার্ড আর্নল্ট (লুই ভিটন, এলভিএমএইচ) – ৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে  

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাজার-বান্ধব নীতির পরিবর্তন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের অনিশ্চয়তা এবং প্রযুক্তি খাতে নতুন নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি এই পতনের অন্যতম কারণ।  

শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন, বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা

যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা বাড়ার ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে এশিয়া ও ইউরোপেও।  

ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধস
-ডাউ জোন্স : ৮৯০.০১ পয়েন্ট (২.০৮%) কমে ৪১,৯১১.৭১ পয়েন্ট
-এসঅ্যান্ডপি ৫০০ : ১৫৫.৬৪ পয়েন্ট (২.৭০%) কমে ৫৬১৪.৫৬ পয়েন্ট
-নাসডাক কম্পোজিট : ৭২৭.৯০ পয়েন্ট (৪%) কমে ১৭,৪৬৮.৩২ পয়েন্ট

এই পতন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে নাসডাকের সবচেয়ে খারাপ দিন হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।  

বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর হ্রাস  
- টেসলা – ১৫.৪% কমেছে  
- এনভিডিয়া – ৫.০৭% কমেছে  
- মাইক্রোসফট – ৩.৩৪% কমেছে  
- ডেল্টা এয়ারলাইনস – ৫.৫% কমেছে  

এশিয়া ও ইউরোপের বাজারেও ধস
- জাপানের নিক্কেই ২২৫: ২.৭% কমেছে  
- টপিক্স সূচক: ২.৮% কমেছে  
- দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি: ২.১৯% কমেছে

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির কারণে প্রযুক্তি ও শক্তি খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।  

শেয়ারবাজার পতনের কারণ কী?

ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি: চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের আশঙ্কা  
প্রযুক্তি খাতের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে নতুন নিয়ম  
ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নীতি: সুদের হার বাড়তে পারে, যা বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে  
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, যা বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে  

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি শেয়ারবাজারে এই পতন অব্যাহত থাকে, তাহলে বড় প্রযুক্তি কোম্পানির মূলধন কমতে থাকবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।  
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শেয়ারবাজারের অস্থিরতা ও ধনকুবেরদের সম্পদের পতন বাজারে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। আগামী মাসগুলোতে বাজার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নীতি যদি স্থিতিশীল না হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বড় ধাক্কা আসতে পারে।

সূত্র: দা বিজনেস টাইমস

আরবি/এসএস

Link copied!