গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেমন অবনতি ঘটেছে। তেমনি উন্নতি ঘটেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কও আগের থেকে গভীর হচ্ছে। সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে এই ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আরও বাড়ার।
দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ পাকিস্তান থেকে আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে কাঁচামাল কেনা সম্ভব।
বিশেষ করে তুলা, সুতা, কাপড় ও প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো এখনো চীন ও ভারতের তুলনায় অনেক কম পাকিস্তানে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলছিলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রায় স্থবির ছিল।’
‘দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে’, বলেও যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬২৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার।
যা আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) ছিল ৬৯৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার।
তবে চলতি অর্থবছরের শুধু জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৩৭২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৬১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের রপ্তানি ৮৩ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম।
আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৩৯ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের পর চলতি বছরই প্রথমবারের মতো (জিটুজি) পর্যায়ে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি একটি জাহাজ বাংলাদেশ উদ্দেশে আসে। যেটিতে সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) চুক্তির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল নিয়ে আসে।
এটি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং কয়েক দশক ধরে স্থগিত থাকা বাণিজ্য চ্যানেলগুলোকে আবার চালু করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ওই আমদানি গত ফেব্রুয়ারিতেই ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। গত মাসে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের তুলা, চিনি, চাল, পোশাক (বিশেষ করে মহিলাদের পোশাক), ফলের (বিশেষ করে আম) ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পাকিস্তানে আনারস, পাট, ওষুধ ও গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করতে পারে।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা অসীম। ইতোমধ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশে ২৬ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে। এটি প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথম ঘটনা। ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের (টিসিপি) মাধ্যমে মোট ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করা হবে। যার বাকি ২৪ হাজার টন আগামী মাসে রপ্তানি করা হবে।’
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান এখন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে।’
‘দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য খাদ্য ও জ্বালানিসহ প্রধান পণ্যগুলোর নির্ভরযোগ্য, প্রতিযোগিতামূলক ও নতুন নতুন উৎস দরকার’, যোগ করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :