ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

দেশে তিন মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৫ হাজার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
ফাইল ছবি

ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা আবারও ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। তাতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণও বেড়েছে। একই সঙ্গে বিত্তশালীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা তিন মাসে ৪ হাজার ৯৫৪টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১তে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। 

এর পরই একশ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী অর্থ পাচার করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা করছে; যার কারণে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। 

গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতের হিসাবসংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি আর আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা তিন মাস আগে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। সেই হিসাবে তিন মাসে কোটি টাকার ওপরে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪টি। এর আগে গত বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অর্থ পাচার কমেছে, অন্যদিকে উচ্চ মুনাফার অর্থ ব্যাংকে রাখছে। এর ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, গত বছরের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। ওই সময় একশ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। একই সময় অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ পাচার রোধে কঠোর অবস্থান নেয়। ফলে এখন দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীরা অর্থ পাচার করতে পারছে না, যার কারণে বিভিন্ন উপায়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমা করছে। 

পাশাপাশি গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। এখন আবার পরিস্থিতি বুঝে ফের ব্যাংকে অর্থ জমা করছেন ফলে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮, এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং গত জুনে সেই হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে, সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে এবং এবং সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে।