ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

বিপাকে পোশাক খাত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
প্রতীকি ছবি

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে পোশাক খাত চরম সংকটে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অধিকাংশ শিল্প-কারখানা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং উৎপাদন কমে গেছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে, আর সরকারি প্রকল্পগুলোও স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মালিকরা ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন।

তৈরি পোশাকশিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও কাঁচামাল আমদানি ও জ্বালানি সংকটের কারণে তারা চাপে রয়েছে। অনেক মালিক সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে, যাতে বেতন-বোনাস দেওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সরকারের কাছে সাত হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে। কারণ তাদের নগদ অর্থের সংকট রয়েছে এবং ঈদের সময় শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে, পাট ও পাটজাত পণ্য খাতও সংকটে রয়েছে, যেখানে দুই লাখ শ্রমিকের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাসের সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্য বিক্রি হয়নি।

সম্প্রতি বিকেএমইএ  সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়,  এক কঠিন সময় পার করছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো । তৈরি পোশাকশিল্পে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ফলে কার্যাদেশ বাড়লেও বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে আবার শ্রম অসন্তোষ দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার সুযোগ পাবে। তাই নগদ সহায়তা বাবদ সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করা না হলে রপ্তানি খাতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত সময়েও দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। ফলে কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাই এই সময়ে অস্বাভাবিকভাবে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। রপ্তানি শিল্পের ওপর কিছু দেশের বায়ারদের আস্থা ধরে রাখতে তৈরি পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রে মূল উৎপাদন খরচ থেকে কম মূল্যে কার্যাদেশ গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন। ফলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কার্যাদেশ বাড়লেও বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সামনেই আছে ঈদের বেতন ও বোনাসের বিশাল চাপ। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে শ্রম অসন্তোষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ন্যূনতম পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড় পেলে শ্রমিক-মালিক উভয়ের জন্য স্বস্তির হবে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো শ্রমিক তাঁদের পাওনা না নিয়ে বাড়ি যাবেন না। এর জন্য সরকারকে আরেকটু সহনীয় হতে হবে। সরকারের কাছে এখনো প্রণোদনার সাত হাজার কোটি টাকা পাওনা। এর মধ্যে সম্প্রতি দুই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে আরো অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।

শিল্প মালিকরা বলছেন, কারখানা চালু রাখতে কর্মীও দরকার। কিন্তু শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এর পরও গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। গ্যাসসংকটে ডিজেল দিয়ে ডায়িং কারখানায় উৎপাদন করা গেলেও স্ট্যান্ডার্ড ও ড্রাক করা যাচ্ছে না। আর ফ্যাব্রিকস ডায়িং করাতে না পেরে সুইং, ফিনিশিং, নিটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং সেকশনের শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

বস্ত্র খাতের বড় সংগঠন বিটিএমএ পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ভারতের আগ্রাসন ও সুতা অ্যান্টিডাম্পিং করার ফলে চলতি বছর রোজার ঈদে স্থানীয় বাজারে প্রায় দেড়শ কোটি ডলারের পণ্য অবিক্রীত থাকবে। ভারত সরকার তাদের উদ্যোক্তাদের সুতা উৎপাদনে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে ৩০ শতাংশ বেশি সুতা আমদানি করেছেন। এতে দেশীয় সুতা ডাম্পিং হচ্ছে।