কালো টাকার প্রভাবেই ভারতমুখী ছিল বাংলাদেশিরা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম

কালো টাকার প্রভাবেই ভারতমুখী ছিল বাংলাদেশিরা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে ঈদে যারা কেনাকাটা করতেন, তাদের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরাম। তাদের তথ্যমতে, প্রতি বছর রমজান মাসের শুরু থেকে ঈদ পর্যন্ত কমপক্ষে দেড় লাখ বাংলাদেশি কেনাকাটার জন্য ভারত যেতেন। তাদের বেশিরভাগই বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রথম ও মধ্যম পর্যায়ের নেতাকর্মী ছিলেন। তাদের হাতে ছিল কালো টাকা। অবৈধ আয়ের দাপুটে নেতাদের জন্য ভারতের কলকাতা ছিল সহজ কেনাকাটার উৎস। ফলে সপরিবারে ছুটে যেতেন তারা।

গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরাম ভারতের ট্যুরিজম বিভাগের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, বছরে শুধু ঈদুল ফিতর উপলক্ষেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ কোটি ডলার যেত ভারতে। ফলে এই সময়ে বাংলাদেশের খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেড়ে যেত।

সংগঠনের সভাপতি ড. এনায়েত করিম গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছর একটি ভিন্ন ঈদবাজার দেখছেন ভারতের বিভিন্ন শপিংমলগুলোর বিক্রেতারা। ক্রেতাশূন্যতায় পড়েছে কলকাতার অনেক শপিংমল। অতীতেও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় পোশাকের প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। সেখানকার কাপড়ের মান, ডিজাইন ও ফ্যাশন আরো আকর্ষণীয় মনে হতো। বাংলাদেশের পোশাক বাজারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড থাকলেও ঈদের মতো বিশেষ উৎসবে ভারতীয় পোশাক কেনার প্রবণতা ছিল বেশি।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে ড. করিম জানান, বিগত দেড় দশকে কালো টাকার প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে, কে কোথায় অর্থ ব্যয় করবে তার একটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছিল। ওই সুযোগটি সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছিল ভারত। তারা বাংলাদেশিদের সহজ ভ্রমণ আর কেনাকাটার সব পথ খুলে দিয়েছিল। বিশেষ করে কলকাতার অর্থনীতি চাঙা হয়েছিল বাংলাদেশিদের টাকায়। কলকাতার নিউ মার্কেট, শ্রী লেদারস, বিগ বাজার ও অন্য শপিংমলগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ক্রেতার সমাগম ঘটত। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের ক্রেতাদের এই বাজারগুলোতে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল মান ও দামের ক্ষেত্রে ভারতীয় পণ্যকে অধিকতর সুবিধাজনক মনে করা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে বাংলাদেশ সরকারের নমনীয়তার সুযোগ আর ভারতে প্রবেশে সহজ পথ বাংলাদেশিদের কেনাকাটার হাব হয়ে উঠেছিল ভারত। তার হিসাবমতে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শপিংমলগুলোয় বছরে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা করতেন বাংলাদেশিরা। এবার সেই চাপ পড়েছে দেশের বাজারে।

তিনি জানান, দেশের শপিংমলগুলোতেও ভারতীয় পোশাকের ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে পাকিস্তানি পণ্যও আছে। তবে এবার এসব পণ্য যেহেতু বৈধ উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, ফলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পাচ্ছে।

ঢাকার বাসিন্দা সৈয়দ নাজমুল হক বলেন, তিনি তার পরিবারকে খুশি করতে এবং ঈদ উপলক্ষে উপহার কিনতে গত বছর রমজান মাসে ভারতে গিয়েছিলেন। তার মতো অনেক বাংলাদেশি ক্রেতা ঈদের কেনাকাটার জন্য ভারতের শপিংমলে ছুটে যেতেন।

তার মতে, ভারতীয় পোশাকের মান ও ডিজাইন বাংলাদেশি বাজারের তুলনায় অনেক ভালো এবং সস্তা মনে হয়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ভারতীয় কাপড় কয়েক মাস ব্যবহারেই নষ্ট হয়ে যায়।

মূলত ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনের কারণে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশিদের ভিড় বলে মনে করেন তিনি।

আরবি/এসআর

Link copied!