ঢাকা রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে রেকর্ড

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইল ফোনে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। এর আগে কখনোই এক মাসে এত টাকা লেনদেন হয়নি। 

আগের মাস ডিসেম্বরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল; যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ। জানুয়ারিতে প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা; ডিসেম্বরে এই অঙ্ক ছিল ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে আরও দেখা গেছে, গত সাত মাস ধরে টানা বাড়ছে মোবাইল লেনদেন। গত বছরের জুন মাসে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৩ টাকা। জুলাইয়ে তা কমে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকায় নেমে আসে।

পরের মাস আগস্টে লেনদেন বেড়ে হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। অক্টোবরে বেড়ে হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে তা আরও বেড়ে হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। হাতের মোবাইল ফোনই এখন ব্যাংক। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠেছে সব ধরনের লেনদেনের অপরিহার্য মাধ্যম। এসব লেনদেনের হিসাব খুলতে কোথাও যেতে হয় না। গ্রাহক নিজেই অনায়াসে নিজের হিসাব খুলে লেনদেন করতে পারছেন। 

মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকিট কেনাসহ কত সেবা যে মিলছে, তা এক দমে বলা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।

২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মার্চে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। তার আগের মাস অক্টোবরে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এভাবেই বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। 

মোবাইল লেনদেনে গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। জানুয়ারিতে সেই গ্রাহক সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৯৯১-এ দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৩। নভেম্বরে গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫।

অক্টোবরে ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩। সেপ্টেম্বরে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে, এটা বলা যায়।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এই সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এই সেবায় এসেছে, তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।