শেখ মুজিবের ছবি সংবলিত নোট নিয়ে বিপাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:১২ এএম

শেখ মুজিবের ছবি সংবলিত নোট নিয়ে বিপাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রতীকি ছবি

রমজান ও ঈদকে ঘিরে বাজারে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। নতুন নোট ছেড়ে সে চাহিদা মেটায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসংবলিত নতুন নোট বাজারে ছাড়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পড়েছে বিড়ম্বনার মুখে। প্রথমে বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে পুরনো ডিজাইনের নতুন নোটই বাজারে ছাড়া হবে।

যদিও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে জানানো হয়, ব্যাংকের শাখায় থাকা নতুন নোটও বাজারে ছাড়া যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ দ্বিধাদ্বন্দ্বের জেরে তৈরি হয়েছে নগদ টাকার সংকট। দেশের অনেক জেলায় ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। নগদ টাকার প্রয়োজন হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে তা সংগ্রহ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেখানে উপস্থিতি নেই, সে জেলায় প্রাথমিকভাবে নগদ টাকার জোগান দেয় সোনালী ব্যাংক।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সপ্তাহের প্রথম দিনে দেশের অনেক ব্যাংকই চাহিদামতো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারেনি। মেলেনি সোনালী ব্যাংক থেকেও। তাই জরুরি প্রয়োজন মেটাতে এক ব্যাংকের শাখা অন্য ব্যাংকের শাখা থেকে নগদ টাকা সংগ্রহ করে গ্রাহকদের প্রয়োজন মিটিয়েছে।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে বাজারে ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের কোন কোন শাখায় নতুন নোট মিলবে তা উল্লেখ করে দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

অন্যদিকে, সোমবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবক’টি তফসিলি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হলো। একইসাথে ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হচ্ছে। তবে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে পরামর্শ দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরস্পরবিরোধী এ সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। সাধারণত ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছোট অংকের নোটের সাথে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোটও বাজারে ছাড়া হয়। এ কারণে নতুন নোটের প্রতি গ্রাহকদের এক ধরনের আকর্ষণ থাকে। বড় নোটের বান্ডিল নেয়ার সময়ও গ্রাহকরা নতুন নোটের সন্ধানে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া চিঠি আমলে নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপকরা নিজেদের ভল্টে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোটও বাজারে ছাড়া থেকে বিরত রয়েছেন। এ কারণেই নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, বাজারে নগদ অর্থের সংকট নেই। নতুন নোট ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে পুরনো নোট রয়েছে। পুরনো নোটগুলোই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ছাড়া হচ্ছে। কোনো জেলায় যদি সংকট তৈরিও হয়, সেটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে সৃষ্টি হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক কেএম ইব্রাহিম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদে আমরা বাজারে নতুন নোট ছাড়ছি না। এপ্রিল-মে মাসে নতুন ডিজাইনের নোট আগামী ছাড়া হবে। বাজারে নগদ অর্থের সরবরাহ নিশ্চিতের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় তদারকি করছে। এখন পর্যন্ত আমরা নোট সংকটের বিষয়ে কিছু শুনিনি। কোথাও যদি সংকট তৈরিও হয়, সাথে সাথে সরবরাহ করার মতো নোট আমাদের হাতে মজুদ আছে। আশা করছি, ঈদে কোনো সংকট হবে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান বলেন, এ মুহূর্তে সোনালী ব্যাংকে তারল্যের সংকট নেই। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ রয়েছে। আমরা চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ও গ্রাহকদের নগদ টাকা সরবরাহ করছি। এখন কোনো শাখার ব্যবস্থাপক যদি না দেয়, সেটি হয়তো বোঝার ভুল।

আরবি/এসবি

Link copied!