ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কম খরচ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০১:৪৩ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময়ে এডিপির মাত্র ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। শুধু বাস্তবায়নের হারই নয়, টাকা খরচের দিক থেকেও জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থ খরচ হয়েছে। 

সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ হাজার ৪৯ কোটি টাকা কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ক্ষমতার পট পরিবর্তন, ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া এবং সরকারের অর্থ ছাড়ে কড়াকড়ি-ে এসব কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে কম টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রকল্প পাশের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন করা যায়নি এবং প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা বিজার করেছে, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে এখনো গতি আসেনি।

কর্মকর্তারা জানান, আগের আওয়ামী সরকারের সময়ে নেওয়া চলমান সব প্রকল্পই অন্তর্বর্তী সরকার পর্যালোচনা করেছে। অগুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অনেক প্রকল্প বা স্কিম বাদ যাচ্ছে। এর প্রভাবও বাস্তবায়নে পড়েছে। আবার জুলাই-অভ্যুত্থানের পরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক চলে গেছেন। 

অনেক প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হারও কমে গেছে। অনেক দেশীয় ঠিকাদারও প্রকল্প এলাকায় এখনো ফিরে আসেনি। একইভাবে বৈদেশিক অর্থায়নের বেশ কিছু প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নেও গতি কমেছে বলে জানা গেছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, ‘জুলাই-পরবর্তী সময়ে সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এ কারণে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়নে খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার রাজস্ব আহরণ করে এডিপির বরাদ্দের জোগান দেয়। বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারের জন্য সরকারি তহবিল থেকে একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। এ কারণে বৈদেশিক অর্থায়নও আসছে না। উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ও কমে গেছে।’

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকারি তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, যা তহবিল বরাদ্দের ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয় ২৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, বেশি বরাদ্দ পাওয়া অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে আছে।  এর মধ্যে বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচের হার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের। এ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। 

এরপরে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেতু বিভাগ ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। 

কম বরাদ্দ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচের হার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। এই বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৭৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৪০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সংসদবিষয়ক বিভাগ ৩৯ দশমিক ৯০ শতাংশ,

 মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৩৫ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৩১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সংসদবিষয়ক বিভাগ ৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩০ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।