ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

ব্যবসায়িক স্বস্তিতে আদানি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১০:১৪ এএম
প্রতীকি ছবি

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আদানি পাওয়ারের বিপুল পরিমাণ পাওনা বকেয়া পড়ে যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। সে সময়ে আদানি পাওয়ারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বিল পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসে গড়ে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিল পরিশোধও বেড়েছে আগের চেয়ে তিন-চার গুণ। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার বিল পাচ্ছে আদানি পাওয়ার। চলতি মার্চেও আদানি পাওয়ারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল পরিশোধ করেছে বিপিডিবি।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় আদানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের জোর দাবি ওঠে। নভেম্বরে এ ক্রয়চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। আদানিসহ ১১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত অক্টোবরে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিটি এরই মধ্যে এসব চুক্তি পর্যালোচনার জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায়ই বাড়ানো হয়েছে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিল পরিশোধ।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিতর্ক থাকলেও এ মুহূর্তে বিপিডিবির সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে আদানি গ্রুপের মধ্যে খুব একটা উদ্বেগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারও এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ ও তাদের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি সরবরাহ নেয়া ছাড়া আর কিছু ভাবছে না। যদিও অসম শর্তের ভিত্তিতে পতিত বিগত সরকার কোম্পানিটির সঙ্গে এ চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীলংকা এরই মধ্যে দুর্নীতি, প্রতিবেশগত ক্ষতি ও বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ার অভিযোগ তুলে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করেছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়াও এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে আদানি পাওয়ারের বিল আসে ৭০-৭৫ মিলিয়ন ডলার। আর গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে আদানি পাওয়ারকে পরিশোধ করা হচ্ছে গড়ে ৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মাসের বিলের পাশাপাশি প্রদেয় বকেয়া বিলও রয়েছে। ৬ মাস ধরেই আদানি পাওয়ারকে এভাবে নিয়মিত বিলের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে বকেয়াও পরিশোধ করা হচ্ছে।

বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা আদানির বকেয়া সাধ্যমতো পরিশোধ করছি। দ্রুত বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, এমন কোনো কিছু নির্ধারিত নেই। বিষয়টি পুরোপুরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল। আমরা সেখান থেকে যেভাবে ভর্তুকির অর্থ পাব, সেভাবেই পরিশোধ করব।

বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিপিডিবির কাছে আদানির হিসাবে এখনো ৭০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা বকেয়া রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে কয়লার দাম নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বিপিডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রদেয় এ অর্থের পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়।

আদানি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ নিয়মিত বিল পাচ্ছে আদানি। তবে খুব বেশি অগ্রগতি নেই বকেয়ার ক্ষেত্রে। গত সপ্তাহেও বকেয়া বিল নিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আদানি ও বিপিডিবির হিসাবে বকেয়া বিলের পরিমাণ নিয়ে চলমান সংকট প্রসঙ্গেও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমাদের যে ওভারডিউ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত পরিশোধ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা আগের চেয়ে বিল পরিশোধের হার বাড়িয়েছি। কারণ এটা না করলে দুটি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রথমত, বিল পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলে তার ওপর জরিমানা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, বকেয়া না থাকলে জ্বালানির দামে সাশ্রয়ী হওয়া যায়।