ঢাকা সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি রংপুর বিভাগের

রহিম শেখ
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১১:০৭ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের ব্যাংক খাতে রংপুরের মানুষ যত আমানত রাখেন, তার চেয়ে বেশি ঋণ করেন। আর আমানতের তুলনায় সবচেয়ে কম ঋণ করেন সিলেটের মানুষ। তবে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণের বড় অংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। আমানত ও ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

ব্যাংকাররা বলছেন, রংপুর বিভাগ দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা। এ কারণে এই বিভাগের মানুষের মধ্যে ঋণ করার প্রবণতা বেশি। আর সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। সে জন্য সিলেট বিভাগের মানুষের মধ্যে ঋণ নেওয়ার চেয়ে সঞ্চয় করার প্রবণতা বেশি। এদিকে দেশের ব্যাংক খাতে ঢাকা বিভাগের আমানত দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। 

একইভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। দেশের এ দুটি বড় বিভাগের বিপুল আমানতের ওপর ভর করে ব্যাংক খাতে সার্বিক আমানত বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট যে আমানত ছিল, তার মধ্যে ৮২ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের। অর্থাৎ, ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৫ ভাগের ৪ ভাগই এ দুই বিভাগের।

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ব্যাংকে সবচেয়ে কম আমানত ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষের। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এই বিভাগের আমানতের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত ডিসেম্বর শেষে ঢাকা বিভাগের আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।

ডিসেম্বর শেষে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা রাখায়, অর্থাৎ আমানতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে ছিল খুলনা বিভাগ। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে এই বিভাগের মানুষের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ। 

ডিসেম্বর শেষে রাজশাহী বিভাগের আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। সিলেট বিভাগের আমানত ছিল ৭৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, রংপুরের ৩৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা এবং বরিশালের ৩৬ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশই হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বড় অংশও এ দুটি বিভাগকেন্দ্রিক। এ কারণে ব্যাংক আমানতের সিংহভাগ যেমন ঢাকা-চট্টগ্রামে, তেমনি ব্যাংক ঋণের সিংহভাগও এ দুটি বিভাগে যায়।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা ব্যবসা-বাণিজ্য ও করপোরেট কার্যক্রম ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এ কারণে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সিংহভাগই এ দুই বিভাগের মধ্যে পুঞ্জীভূত থাকে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ আমানত ছিল, তার প্রায় ৮৯ শতাংশই ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের পর ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত আমানত থাকে প্রায় ২ লাখ ৮৩৪ কোটি টাকা।

বিভাগওয়ারি আমানত ও ঋণের হিসাব

গত ডিসেম্বর শেষে রংপুর বিভাগের আমানতের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। আর একই সময়ে এই বিভাগে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বিভাগটিতে আমানতের তুলনায় ২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে।

আমানতের তুলনায় রংপুর বিভাগে ঋণ বেশি হলেও সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি ঋণ ঢাকা বিভাগে। গত ডিসেম্বর শেষে এই বিভাগের ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১১ লাখ ৫২ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই বিভাগের আমানতের বিপরীতে ২ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। 

আমানতের তুলনায় ঋণ কম করেন সিলেট বিভাগের মানুষ। এই বিভাগে গত জুন শেষে আমানত ছিল ৭৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। তার বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এই বিভাগের আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণের হার ২৫ শতাংশ।

আমানতের কত শতাংশ কোন বিভাগে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে দেশের মোট আমানতের প্রায় ৬১ শতাংশই ছিল ঢাকা বিভাগের। এর পরের অবস্থান চট্টগ্রাম বিভাগের। ব্যাংকের মোট আমানতের ২১ শতাংশ এই বিভাগের। 

এছাড়া ব্যাংকের মোট আমানতের ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ খুলনা বিভাগের, ৪ দশমিক ১২ শতাংশ রাজশাহী বিভাগের, ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ সিলেট বিভাগের, ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বরিশাল বিভাগের, ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ রংপুর বিভাগের এবং ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ ময়মনসিংহ বিভাগের।