ঢাকা সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

কাট্টালি টেক্সটাইলের ২৫ কোটি টাকা উধাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১০:১৭ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড। ২০১৮ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা ৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ কোটি টাকার বেশি তছরুপ করা হয়েছে। 

বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে লিস্টিং ফি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসিকে পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) এক মাসের মধ্যে লিস্টিং ফি পরিশোধ করতে না পারলে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হবে। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কাট্টালি টেক্সটাইল তালিকাভুক্তির আগে থেকেই অনিয়মে জড়িত। তবু বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেয় এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে। তবে সরকারের পট পরিবর্তনের পর বর্তমান কমিশন কোম্পানিটির অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছে, কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড কর্তৃক কমপক্ষে ২৫ কোটি ৪ লাখ টাকার আইপিও তহবিল তছরুপের বিষয়টি দুদকে পাঠানো হবে। এ ছাড়া কাট্টালি টেক্সটাইলকে এক মাসের মধ্যে লিস্টিং ফি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে পরিশোধ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ফি পরিশোধে ব্যর্থ হলে কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২ লাখ টাকার অর্থ
দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

কাট্টালি টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভুল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনা করেছে। অ্যাডজাস্টেড নামে ইপিএস দেখিয়েছে। অপচয়যোগ্য সম্পদের ওপর অবচয় ধার্য করা হয়নি, ফলে বেশি দেখানো হয়েছে মুনাফা ও সম্পদ। লঙ্ঘন করা হয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইনও।

বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস) ৩৩-এর ৬৪ অনুযায়ী, পূর্বের বছরের শেয়ারপ্রতি মুনাফা নির্ণয় করতে হয় বর্তমান শেয়ার দিয়ে। কিন্তু কাট্টালি টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাসে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেয়ারকে বিবেচনায় না নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ইপিএস গণনা করা হয়। ফলে প্রকৃত অর্থে ইপিএস যা হওয়ার কথা, প্রসপেক্টাসে দেখানো হয় তার থেকে বেশি।

কাট্টালি টেক্সটাইল প্রসপেক্টাসের ১৮৬ পৃষ্ঠায় ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের মুনাফা দেখানো হয় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার ১২৬ টাকা এবং ইপিএস দেখানো হয় ১ টাকা ৯৯ পয়সা। কিন্তু ওয়েটেড অ্যাভারেজ করে ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে শেয়ার দেখানো হয় ৫ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৭টি। সে হিসাবে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হওয়ার কথা ১ টাকা ১২ পয়সা। অর্থাৎ, ভুল পদ্ধতিতে হিসাব করে বছরটিতে ইপিএস ৮৭ পয়সা বেশি দেখানো হয়। আবার অ্যাডজাস্টেড ইপিএস বলে কিছু না থাকলেও কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে অ্যাডজাস্টেড নামে ইপিএস দেখায়। প্রসপেক্টাসে অ্যাডজাস্টেড নামে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের ইপিএস দেখানো হয় ১ টাকা ৫ পয়সা।

কাট্টালি টেক্সটাইলের ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মধ্যে রাস্তা, ওয়াল ও ড্রেনেজ রয়েছে। এগুলোর নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে। তাই বিএএস-১৬ অনুযায়ী অবচয় চার্জ করতে হয়। কিন্তু কাট্টালি কর্তৃপক্ষ এসবের ওপর অবচয় চার্জ করেনি। ফলে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয় প্রসপেক্টাসে।

২০০২ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে গঠিত কাট্টালি টেক্সটাইলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৪ সালে। এরপর ২০১৬ সালে প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর হয়।

২০১৮ সালে মেশিনারিজ ও ইকুইপমেন্ট ক্রয় ও আইপিও খাতে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তবে টাকা পাওয়ার ২১ মাসের মধ্যে ব্যবহারের কথা বলে হলেও তা করা হয়নি। উত্তোলিত আইপিওর অর্থ ২৫ কোটি টাকার বেশি তছরুপ করা হয়েছে।