দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদ্যমান উৎপাদন বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) চূড়ান্ত খসড়া হাতে পেয়েছে পেট্রোবাংলা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে করা এ পিএসসি চূড়ান্ত করে দ্রুত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে যেতে চায় পেট্রোবাংলা।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া খসড়ার ওপর এরই মধ্যে বেশকিছু সংশোধন ও সুপারিশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ সুপারিশ চূড়ান্ত করে জ্বালানি বিভাগে পাঠাবে পেট্রোবাংলা। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর চূড়ান্ত দরপত্রে যাবে পেট্রোবাংলা।
অফশোরে (সাগরে) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোনো কোম্পানির সাড়া না পাওয়ায় গ্যাসের দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে স্থলভাগে (অনশোর) গ্যাস অনুসন্ধানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে মনে করছেন পেট্রোবাংলা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সময় সাপেক্ষ বিষয়। এর চেয়ে কম সময়ে স্থলভাগের অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব। দেশে গ্যাসের চাহিদা বিবেচনায় স্থলভাগই কম সময়ে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে দ্বিমাত্রিক জরিপের ভিত্তিতে উচ্চ সম্ভাবনাময়, মাঝারি সম্ভাবনাময় ও ন্যূনতম সম্ভাবনাময়—এ ৩ ক্যাটাগরিতে ব্লকগুলো ভাগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেশীয় অনুসন্ধান কোম্পানিগুলোর অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে অনশোর পিএসসিতে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়াল ও মানবসম্পদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কাজ পাওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
আরও জানা যায়, দেশে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের মোট উৎপাদন এক হাজার ৮৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন একাই গ্যাস উত্তোলন করছে দৈনিক এক হাজার ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ৩টি দেশীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানির উৎপাদন দৈনিক গড়ে ৭২০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি।
স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থলভাগে বড় আকারে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, অনশোর পিএসসি এমনভাবে করা হোক, যেখানে দেশি-বিদেশি সব কোম্পানি কাজ করতে আগ্রহী হয়। দেশে তীব্র গ্যাসের সংকট। গ্রিডে দ্রুত গ্যাস প্রয়োজন। পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এককভাবে শুধু স্থানীয় কোম্পানি নয়, বিদেশি অনেক কোম্পানি বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এমনকি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, উড ম্যাকেঞ্জি পিএসসি হালনাগাদ করে একটা ড্রাফট পাঠিয়েছে। ওই রিপোর্টের ওপর একটি পেপার প্রেজেন্টেশন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৬ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি কিছু সংশোধন ও সুপারিশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে পেট্রোবাংলার পিএসসি কমিটিও উড ম্যাকেঞ্জির রিপোর্ট নিয়ে একটি বৈঠক করেছে। তারা সেটি সংশোধন করে পাঠালে চূড়ান্ত করে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে। সেখান থেকে কোনো সুপারিশ থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এরপর ওই পিএসসি হালনাগাদের ওপর উন্মুক্ত মতামত নেবে মন্ত্রণালয়। এসব প্রয়োজনীয় কার্যক্রম করতে অন্তত দুই মাস সময় প্রয়োজন। সেই হিসাবে অনশোর পিএসসি চূড়ান্ত করতে আগামী জুন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, স্থলভাগে অনেক এলাকা এখনো অনাবিষ্কৃত। এসব এলাকায় গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অনশোর পিএসসি আপডেট করে যদি বিদেশি কোম্পানি আনা যায় তাহলে দ্রুত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমাদের দেশে গ্যাসের সংকট প্রকট। পিএসসি এ রকম আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন, যেন ভালো কোম্পানি পাওয়া যায়। তবে লাভ-লোকসানের হিসাবটাও ভালোভাবে হতে হবে। যাতে দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশের স্থলভাগে ২২টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি। খালি থাকা ব্লকগুলো হচ্ছে- ১, ২এ, ২বি, ৩এ, ৪এ, ৪বি, ৫, ৬এ, ২২এ, ২২বি ও ২৩ নম্বর। এসব ব্লকে কাজ করতে যোগ্যতম বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ কোম্পানি গঠন করে দরপত্রে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করছে পেট্রোবাংলা। সেই সঙ্গে স্থলভাগের গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :