মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

এডিবির বিনিয়োগে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

এডিবির বিনিয়োগে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শতাধিক প্রকল্পে ১৭.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যার অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বলে জানিয়েছে এনজিও ফোরাম অন এডিবি।

সংস্থাটি বলছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এমন একমুখী বিনিয়োগ নীতির ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ক্রমশ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির বিনিয়োগ ঝুঁকি উন্মোচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।

এডিবির ৫৮ তম বার্ষিক সাধারণ সভার আগে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এনজিও ফোরাম ও কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভাইরোনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)।

এ সময় বক্তারা বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ মডেলের কড়া সমালোচনা করেন। তারা জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে এডিবির প্রতি আহ্বান জানান।

এনজিও ফোরামের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির বিনিয়োগকৃত প্রকল্প ১০৬টি। এর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, তেল-গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে এডিবির বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

ফলে এডিবির ৯.৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৬৭টি জ্বালানি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। যা এশিয়ার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থাটির পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এ ছাড়া সংস্থাটির একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষণ বলছে, এডিবির ৬৫% ($১১.৩৬ বিলিয়ন) প্রকল্পে কোনো প্রকার সুরক্ষা শ্রেণিকরণই নেই, যা স্পষ্টতই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত প্রকল্পে বরাদ্দ ৭.৯৫%, আর বাস্তুচ্যুতি ও স্থানীয়দের সুরক্ষায় বরাদ্দ মাত্র ০.৩৫% (৬০.৫৮ মিলিয়ন ডলার)।

এনজিও ফোরাম অব এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারাভিযানকারী শারমিন বৃষ্টি বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান এডিবির টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

সংবাদ সম্মেলনে এনজিও ফোরাম অন এডিবির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগের বৈষম্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এডিবি বাংলাদেশে ২,৮৮৪.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যার মধ্যে ৮২.৯% অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পে, মাত্র ২.৫৫% সৌরবিদ্যুতে এবং বায়ু বিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার, যা বেশ উদ্বেগজনক।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এডিবির জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানিনীতি সংস্কার প্রয়োজন, যেখানে সক্রিয়ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করার কৌশল গ্রহণ করতে হবে, একটি ন্যায়সংগত ও সমতাভিত্তিক জ্বালানি রূপান্তরের নেতৃত্ব দিতে হবে। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে অর্থায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, যাতে কার্বন নির্ভরতা রোধ করা যায়।’

এডিবির বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে অর্থায়ন বিশ্লেষণ করে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, ‘এডিবি ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে গ্যাস নেই জেনেও তারা কাজটি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘কল্পিত গ্যাসের ওপর নির্ভর করে আবার খুলনায় ২২৫ ও ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। অথচ এসব প্রকল্প গ্যাসের অভাবে বছরের পর বছর বসে আছে, জনগণের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এডিবি কাজটি করতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের সম্মুখ ভাগে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এডিবি এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন করে চলেছে, যা আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে এডিবিকে অবশ্যই তার জ্বালানিনীতি পরিবর্তন করে শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে যেতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এনজিও ফোরাম অন এডিবি ও ক্লিন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে তিনটি প্রধান দাবি উপস্থাপন করে।

এগুলো হলো, জীবাশ্ম জ্বালানিতে সব অর্থায়ন বন্ধ এবং ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরে সমর্থন, প্রকৃত সুরক্ষা বাস্তবায়ন ও এফপিআইসি (ফ্রি, প্রায়োর এবং ইনফর্মড কনসেন্ট) নিশ্চিত করা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রাখা এবং কার্বন মার্কেট, গ্রিনওয়াশিং ও কর্পোরেট স্বার্থের নামে ছদ্ম জলবায়ু সমাধান প্রত্যাখ্যান করা।

Link copied!