ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলন

ওয়াশিংটনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম

ওয়াশিংটনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি, সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। এবারের সভায় ৬৮টি দেশের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা প্রতিশ্রুতির প্রতি সমর্থন দিয়েছে বিশ্বের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান দুটি।

এবারে সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এদিকে, বিশ্বব্যাংকেরও পূর্বাভাসে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে বলে গতকাল জানানো হয়েছে।

সভা থেকে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউউ লুকে এবারে বলা হয়েছে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বিশ্বের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে স্থির থাকবে। ২০২৫ সালের পর বৈশ্বিক সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে। তবে তথ্য উল্লেখ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আলাদা কোনো পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণ নেই বাংলাদেশ নিয়ে।

বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা ২১ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিনব্যাপী হবে। গত সোমবার প্রথমদিনে আটটি সেশনে মুদ্রানীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ুসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাত ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।

এবার সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার প্রত্যাশা বাংলাদেশের। আর সে কারণে বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিয়ে আশা প্রকাশ করছে বাংলাদেশ।

আইএমএফের আগের পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ পূর্বাভাস ছিল। তবে মূল্যস্ফীতি আগেও ৯ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে বিশ্বের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে স্থির থাকবে বলে সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে। ২০২৫ সালের পর বৈশ্বিক সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে। আইএমএফ প্রতিবছর এপ্রিলে একটি এবং অক্টোবরে আরেকটি ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রকাশ করে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনের ১ম দিনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফের) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিয়ানো জর্জিয়েবা। এক বৈঠকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিয়ানো জর্জিয়েবা শ্রীলঙ্কার প্রশংসা করেন। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কার কথাও।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সাফল্য তাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলো শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারে। দেশটিতে রাজাপাকসে সরকারের দুর্নীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরকার পতন এবং অর্থনীতির দেউলিয়া নিয়ে কথা বলেন তিনি। ক্রিস্টিয়ানো জর্জিয়েবা বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং কম আয়ের দেশে সংখ্যার বিচারে মূল্যস্ফীতি কমাটাই সব নয়। এখানে অন্য অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে।

এদিকে, বিশ্বব্যাংকেরও পূর্বাভাসে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর হালনাগাদ প্রতিবেদনে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৪ শতাংশে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) চলতি অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে গত মাসে প্রাক্কলন করেছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদন হয় ৪.৭ বিলিয়ন। এ ছাড়াও আইএমএফের একটি পৃথক কর্মসূচির আওতায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন হতে পারে। আগের অনুমোদন হওয়া ঋণ মোট ৭ কিস্তিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত দেওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তিন কিস্তির ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন ঋণ কী শর্তে, কয় কিস্তিতে দেওয়া হবে, সে রূপরেখা বার্ষিক সভার ফাঁকে বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তার পূর্ব প্রতিশ্রুতির ১৫০ কোটি ডলার ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে নতুন করে ৩০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার শেষ দিন ২৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) আন্না বেজার্ডের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক রয়েছে। এর পরদিন অর্থ উপদেষ্টা ঢাকার উদ্দেশে ওয়াশিংটন ছাড়বেন। 
উল্লেখ্য, আইএমএফএর সঙ্গে বাংলাদেশের এই মুহুর্তে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

আরবি/এস

Link copied!