বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে মেগা প্রকল্পের নামে নেওয়া বিদেশি ঋণগুলো। সরকারের আমলে বাস্তবায়িত ২০টি মেগা প্রকল্পের জন্য নেওয়া ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কর্ণফুলী টানেলের কেন্দ্র পর্যন্ত একাধিক প্রকল্প থেকে সুফল না আসায় ঋণ পরিশোধের চাপ আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
২০২৩ সালের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২০২৮ সালে বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ তিন গুণে পৌঁছাবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে, যাতে আরও চাপ বাড়াবে শুধু রাজস্ব আহরণ ও রেমিট্যান্স আয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে।
এদিকে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি ছাড়াই ২০টি মেগা প্রকল্পে নেওয়া ঋণের বড় একটি অংশই রাশিয়া (৩৬.৬%), জাপান (৩৫%), এবং চীনকে (২১%) পরিশোধ করতে হবে।
কিছু প্রকল্প যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিদেশি ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা অর্থনীতিতে সুফল আনতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেন, যা গ্যাস সংকটের কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না।
এছাড়া উদ্বোধনের আগেই শুরু হয়েছে চীনের অর্থায়নে নির্মিত কর্ণফুলী টানেলের ঋণ পরিশোধ প্রকল্প। ২ শতাংশ সুদে নেওয়া ৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প এখন সরকারের জন্য "গলার কাঁটা" হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একাধিক মেগা প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধের সময় শুরু হওয়ায় ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সতর্ক করে বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধের বোঝা মোকাবিলায় রাজস্ব বৃদ্ধি ও অর্থনীতির দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে আরও স্বচ্ছতা ও যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, জনগণের করের অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধের বোঝা আরও দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করবে।
আপনার মতামত লিখুন :