দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে চাহিদা মত টাকা ছাপিয়ে সহাযতা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরো দেয়া হবে। আগামী রোববার থেকে কোনো গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত যাবে না। গ্রাহকদের অনুরোধ, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু টাকা তোলার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড আহসান এইচ মনসুর। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম টাকা ছাপাব না। কিন্তু সেথেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি। তবে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সেই টাকা আবার তুলে নিয়ে আসব। কিন্তু মনিটরি পলিসি আগের মতো টাইট থাকছে। এখানে নেট মানি ক্রিয়েশন হচ্ছে না। একদিকে সহায়তা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডের মাধ্যমে তুলে নিচ্ছি। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এই সহায়তা দেয়া হবে। আমাকে ডিপোজিটর ও মূল্যস্ফীতি দুটিই রক্ষা করতে হবে। টাকা ছাপাব না বলেছিলাম। কিন্তু মানুষের অবস্থার কি পরিবর্তন হয় না?
আগের সরকারও টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করেছিল, আবার এখনো দেয়া হচ্ছে, এখন তাহলে তফাৎ কি এমন প্রশ্নের উত্তরে গর্ভনর বলেন, ব্যাংক থেকে এখন আর টাকা চুরি হচ্ছে না। আগে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেয়ার পর টাকা বাইরে চলে গেছে। কিন্তু এখন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আগে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হলেও কোনো উন্নতি হয়নি প্রবলেম ব্যাংকগুলোর। কিন্তু এখানে ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকের বোর্ড চেঞ্জ হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে তদারকি করা হচ্ছে।
এস আলমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, উনি কি বলেছেন তা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিজিদের পদত্যাগ চেয়েছেন কেউ কেউ, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকে কেউ চাপ দিলে চাকরি ছেড়ে চলে যাব। আমি কোনোকিছু বরদাশত করব না।
বিগত দিনে যারা অনিয়মে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সামনের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নিদিষ্ট অভিযোগ না পেলে আমি নিজ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেব না। এখানে দলাদলি আছে। লাল, নীল দলের প্রতিনিধিত্ব না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হয়ে কাজ করেন।
বর্তমানে ব্যাংকাতে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা খেলা ফিরিয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন , খেলাফি দিন কমিয়ে দেখানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। হয়তো ভবিষ্যতে খেলাফে ঋণ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু কোন তথ্য গোপন করা হবে না। এখনো সব চিত্র সামনে আসেনি। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আবার কাজ করছি। ক্লাবেরিন যতই হোক না কেন আগে সঠিক তথ্য নিয়ে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক খাত যা খারাপ হওয়ার তা আগেই হয়েছে। কিন্তু সঠিক অ্যাকাউন্টিং এর অভাব ছিল। সেটাকে আমরা সঠিক করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ব্যাংকে শৃঙ্খলা আসবেনা। অনেক আইন ছিল কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো আরো শক্তিশালী করার কাজ চলছে। আশাকরি কাজ হবে। তিনি সরকারি ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়ে বলেন, আমরা সুপারভাইজ করি। এটা মূলত সরকার দেখে। তবে আমরা পরামর্শ দিব।
খেলাপির ইস্যুতে তিনি বলেন, অনিয়ম ঢাকব না। খেলাপি প্রকাশ করা হবে। গোপনের বিষয় না। যতদূর হয় হবে ১২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ হলেও কোন সমস্যা নেই। সেখান থেকে কমানোর আমাদের স্বার্থকতা।
ডেপুটি গভর্নের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষযটি দেখছি। যা ভাল তাই করব। তবে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে না। কোন কর্মকর্তা ঘুষ বা অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :