ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

বিলস আয়োজিত বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পে অগ্রগতি এবং বহুজাতিক কোম্পানী ও ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

মঈন মাহমুদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম

বিলস আয়োজিত বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পে অগ্রগতি এবং বহুজাতিক কোম্পানী ও ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস-এর উদ্যোগে ও নেদারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন মন্ডিয়াল এফএনভি-এর সহযোগিতায় আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে তৈরী পোশাক খাতে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকের মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং জেন্ডার নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শ্রমিকের জীবনমান, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি নিশ্চিতকরণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরন করতে হবে।

তারা বলেন, ব্র্যান্ডস ও বায়ারদের সরবরাহ চেইনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতা নীতি অনুসরন করে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ব্যান্ডস-বায়ারদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিলসের বাস্তবায়নাধীন “তৈরি পোশাক খাতে শোভন কাজ নিশ্চিতকরণে সামাজিক সংলাপ” শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন এবং ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে ৩১ অক্টোবর সিরডাপ অডিটরিয়ামে এই গোল টেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা উল্লেখ করেন, সরবরাহ চেইনে মানবাধিকার নিশ্চিত করা একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া, সুতরাং এর প্রতিটি ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের দুর্বলতাগুলোকে সঠিকভাব চিহ্তি করতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

তারা বলেন, কোড অব কন্ডাক্টগলোকে সমন্বিত করে মানবাধিকার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াগুলোকে সহজীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি শ্রম আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপরও তারা গুরুত্ব আরোপ করেন। বক্তারা মন্তব্য করেন আইএলও’র একাধিক কনভেনশন অনুসাক্ষর করা হলেও কিছু কিছু কনভেনশন সঠিকভাবে অনুসরন করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সংশ্লিষ্ট রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

ব্র্যান্ডস এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের পক্ষে যতগুলো কারখানা পরিদর্শন করা সম্ভব হয়, বাংলাদেশে তার চাইতে অনেক বেশী তৈরী পোশাক কারখানা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে নিয়ে একটি কার্যকরী নেটওয়ার্ক গঠিত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া দুর্বলতার চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি ম্যাপিং প্রয়োজন বলে তার উল্লেখ করেন।

শ্রম অধিদপ্তর ও কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তৈরী পোশাক শিল্পে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে শ্রম আইনের বাস্তবায়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক নীতি অনুসরনে বিষয়টি সকলপক্ষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে করা যেতে পারে।  

ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ চেইনের একটি ম্যাপিং তৈরীর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা বলা হয়, এ ক্ষেত্রে সরকার, মালিকপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজকে একত্রে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি আইনের গণতান্ত্রিক প্রয়োগের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে কর্মরত শ্রমিকের আবাসনেও তাদের জীবনমান উন্নয়নেও সকল পক্ষকে একত্রিত হয়ে কাজ করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বিলস ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাদল খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাজেরা খাতুন,  শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল ইসলাম, ড্যানিশ দূতাবাসের সেক্টর কাউন্সিলর ওলে জাস্টিন, আইএলও’র কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ আনিস, বিলস নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, বিলস সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী, পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, এইচ অ্যান্ড এম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রদীপ গ্যাব্রিয়েল, শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাস, ইটিআই এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবিল বিন আমিন,  ফেয়ারওয়্যার ফাউন্ডেশনের আশফিক আহমেদ, আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিলের অভিজিত মুৎসুদ্দি, ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাজেকুজ্জমান রতন, নইমুল আহসান জুয়েল, শহীদুল্লাহ বাদল, চায়না রহমান, এ এ ফায়েজ হোসেন, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

 গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আওরঙ্গজেব আকন্দ ।

আরবি/জেডআর

Link copied!