ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বদলেছে সরকার, বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম

বদলেছে সরকার, বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট

রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে  ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা, সোনালি ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা ও ডিমের ডজন ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ প্রতি ডজন ডিম আগের থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দাম মেলাতে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । সোনালি মুরগি সপ্তাহের ব্যবধানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল সর্বস্তরের জনগণ। যেই স্বপ্নে থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। কিন্তু, সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাড়তি দামে কিনেতে হচ্ছে এসব পণ্য।  চাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম, মাছ থেকে শুরু করে সকল নিত্যপণ্যের দামই চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বদলেছে সরকার তবে বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট। এখনো তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদন ব্যয় না কমিয়ে ডিম ও মুরগীর উল্টো বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে সারাদেশের প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাভবান হবে কর্পোরেট কোম্পানি। যারা সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসাবে কাজ করে। পোল্ট্রি খাবারের দাম বেশি। ফলে ডিম ও মুরগি উৎপাদনে খরচ বেশি। কিন্তু সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় প্রান্তিক খামারিদের লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। ফিড ও বাচ্চার দাম নির্ধারণ না করে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত সুফল বয়ে আনবে না। একইসাথে, বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

শাকিল আহমেদ একজন বেসরকারি চাকুরিজীবি বলেন, “দেশের সাধারণ মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম সরকার নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। সরকার এ দুটি পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে রাজধানীর কোথাও এই দামে বিক্রি হচ্ছে না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, অসাধূ ব্যবসায়ী সিনিাডকেট এখনো সক্রিয়। সরকার পরিবর্তন আমাদের জীবন মান পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ, সরকার পরিবর্তন হয়েছে, সিন্ডিকেট পরিবর্তন হয়নি।”

পোল্ট্রি মালিকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে কর্পোরেট গ্রুপ লাভবান হচ্ছে। আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবো যারা প্রান্তিক খামারি। এতে পোল্ট্রি শিল্প আরও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।

শনিবার, রাজধানীর নবাবগঞ্জ বাজার, ছাপড়া মোড় মিনি বাজার, মিরপুর ১১, ধানমণ্ডি ১৫ ও শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে ডিম ও মুরগি বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একইসাথে সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই চড়া রয়েছে।

নবাবগঞ্জ বাজারে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘‘বিগত সরকার যেমন দাম বেধে দিতেন কিন্তু সরেজমিনে বাজার মনিটরিং করতেন না বর্তমান বিপ্লবী সরকারেরও তো দেখি একই হাল। আমরা সাধারণ মানুষ চাই বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ডিম, মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম নাগালের ভিতর আনা হোক।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক আশা করেছিলাম ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসলে বাজারে দাম কোমবো, গরুর গোস্ত মাঝখানে দাম কোমলে খাইছিলাম ভাবছিলাম আবারো কমবো কিন্তু এখন কেন কমেনা বুঝতে পারছি না“

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে আসা এক ক্রেতা সোনিয়া আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “গোস্ত তো আর কিনতে পারিনে, কিনে খাই একটু ডিম তাতেও আগুন! সুনলাম দাম কমছে, কিন্তু ওমা! দামতো দেখি আগের মতই, কোম-কোমতি নেই খালি বাড়তি, খামু কি ? কুমড়ার কেজি ৪০, ডিমের হালি ৫৫ টেকা। চাল কিনে খাই ৬০ টেকা জীবনডা কষ্টের ভাই।“

শান্তিনগর বাজার ঘুরে সবজির দাম:
শসার কেজি ৪০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, লাউ ৪০-৫০ টাকা পিস, কাকরোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, বেগুন লম্বা ৫০-৫৫ টাকা দেশি বেগুন ৬৫-৭৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, শিম ১৫০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে৷

বাজার ফের অস্থির ও নির্দেশনা অকার্যকর এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন  ‘ভোক্তা অধিকারের কাজ চলমান রয়েছে। আপানার জানেন, আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনশীল রাখতে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বাজার মনিটরিং এর কাজ করে আসছে।

এদিকে, রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও সব ধরনের চাল এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাত দিনের ব্যবধানে আটা ও রসুনের দামও বেড়েছে।

রাজশাহী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কাঁচামাল রাজধানীত ঢুকেই দাম বাড়ে দুই গুণ-তিন গুন। যেন দেখার কেউ নেই। নিত্যপণ্যের চড়া দামে ক্ষিপ্ত জনসাধারণ থেকে সর্বস্তরের মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবার প্রশ্ন ওঠছে স্বাধীন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু এর দায় নিতে রাজি নয় কেউ।

প্রাথমিকভাবে জানাগেছে নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নানান তথ্য। রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে নারয়ণগঞ্জ কাঁচা বাজার হাত বদলে চলছে চাঁদাবাজি। আগের মতই চাপা ভয়ে মুখে কুলুপ দিয়ে আছেন সাধারণ ব্যবসায়ী এবং ভুক্তভোগীরা। ব্যবসায়ীরা বলছে, এখনো সরব হয়েছে সিন্ডিকেট। তবে পুরাতনদের স্থান দখল করেছে নতুন রাজনীনৈতিক ব্যানারে।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের ৭ দিন পর ছাত্রদের সরব উপস্থিতিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হতে। সেসময় বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আরও কমবে সবজির দর। তবে সময় যত গড়িয়েছে দাম কমেনি উল্টো বেড়েছে । সরব হয়েছে সিন্ডিকেট পুরতনদের স্থান দখল করেছে নতুন করে অন্য রাজনীনৈতিক ব্যানারে।

আরবি/এস

Link copied!