ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ডলার সংকটে অস্থিরতা

সহিংসতায় আমদানি রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম

সহিংসতায় আমদানি রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের চলমান অস্থিরতায় কমেছে ডলার সরবরাহ। অন্যদিকে পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধি ও যোগান কমে যাওয়ায় ডলারের সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। গত সপ্তাহে বুধবার ডলার প্রতি দর ১১৯ টাকা নির্ধারণ করে মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমসিএবি)।
 

নির্ধারণের পরদিন বৃহস্পতিবার মানি এক্সচেঞ্জগুলো নগদ ডলার শুন্যতার ভোগে। তবে ব্যাংকগুলো সরবরাহ না বাড়ায় গতকাল রোববার ডলারের সংকট কাটেনি। ফলে আমদানী-রপ্তানী খাতে বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে দেশ। দেশের চলমান কারফিউ ও সহিংসতার মধ্যে গতকাল রোববার ঢাকার মতিঝিলে অধিকাংশ মানি চেঞ্জার্সগুলোকে ডলার শূন্যতায় ভুগতে দেখা গেছে।

এদিকে, সংঘাতময় দেশে ফের সহিংসতার আশঙ্কায় সরকারের কারফিউ ঘোষণায় অর্থনীতি আরো অসীম শূণ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সহিংসতা এড়াতে আজ সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
 

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমসিএবি) বুধবার ডলার প্রতি দর ১১৯ টাকা নির্ধারণ কওে মানি চেঞ্জারগুলোকে চিঠি দেয়। এমসিএবির ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার টাকার মান আরো ৬ টাকা কমে। সেই ধারা অব্যহত রয়েছে। খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে গতকালও প্রতি মার্কিন ডলার ১২৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। সংকটের কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, দেশে চলমান অস্থিরতায় ডলারের সরবরাহ কম। অন্যদিকে নগদ ডলারের চাহিদা আরো বাড়ছে। যার কারণে নির্ধারিত মূল্য ১১৯ টাকায় ডলার সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
 

অন্যদিকে পর্যাপ্ত ডলার না পাওয়ায় পণ্য সরবরাহ ও জাহাজীকরণের সময়সীমা মেনে চলতে পারছে না রপ্তানিকারকরা। যার ফলে পণ্যের দামে ছাড় দেয়ায় পোশাক
খাতে সরাসরি ৮০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকা দেশে খোলাবাজারে নগদ ডলারের দামে হঠাৎ অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ঢাকার খোলাবাজারে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৪-১২৫ টাকায় উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে ছিল। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত খোলা বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক গন্ডগোলের সুযোগে দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়বে-কমবে, এটাই স্বাভাবিক। দাম বাড়ার তথ্যের ক্ষেত্রে পুরো চিত্র বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। কমপক্ষে ছয় মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা উচিত। অর্থনীতিতে খোলাবাজারের ডলারের দামের তেমন অবদান নেই।

বাড়ল ডলারের দাম

খোলাবাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকম ধারাতেই ছিল। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে, যা বৃহস্পতিবার ১২৫ টাকায় পৌঁছায়। ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা আগের দামেই ডলার বিক্রি করছে। বেসরকারি সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে গতকাল প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো পরিচিত গ্রাহক ছাড়া অন্যদের কাছে তেমন ডলার বিক্রি করছে না।

প্রবাসী আয়ে ধাক্কা

দেশে গত সপ্তাহে প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ২১ থেকে ২৭ জুলাইÑ সাত দিনে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার; যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ৪০-৫০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১-২০ জুলাই ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, আর ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। প্রবাসীরা গত মাসে (জুনে) দেশে ২৫৪ কোটি ডলার আয় পাঠান, যা গত তিন বছরের মধ্যে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে।

অস্থিরতায় রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

চলমান অস্থিরতা ও কারফিউয়ের কারণে দেশের রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় সব বড় খাতের রপ্তানি কমেছে। গত ৩১ জুলাইয়ে রিজার্ভ ২০
দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। আগের হিসাবের তুলনায় তা প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কম। রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক আট শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, চলমান অস্থিরতায় রপ্তানিকারকরা পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা অনিশ্চয়তা ও উদ্বিগ্নের মধ্যে আছেন। পণ্য সরবরাহ ও জাহাজীকরণের সময়সীমা মেনে চলতে না পারায় রপ্তানিকারকদের পণ্যের দামে ছাড় ও বন্দর বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে সরাসরি ৮০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। অস্থিরতার কারণে গত ১২ দিনে অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।
সংঘাতময় দেশে ফের সহিংসতার শঙ্কায় সরকারের কারফিউ ঘোষণায় অর্থনীতি আরো অসীম শূণ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!